শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বহু প্রতীক্ষিত এই নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। ডাকসুর পর জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সবচেয়ে বেশি নজর রয়েছে ডাকসু নির্বাচনেই।
২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ শাসনামলে একবার ডাকসু নির্বাচন হলেও সেটি নানা বিতর্কে ঘেরা ছিল। এরপর আর কোনো ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই নির্বাচন শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সারা দেশের জনগণের মধ্যেও আগ্রহ জাগিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, ২০২৪ সালের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। সেই নেতৃত্ব এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যুক্ত। তাই ডাকসু নির্বাচন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রথমত দীর্ঘদিন পর এই ভোট হচ্ছে। দ্বিতীয়ত জুলাইয়ের পরিবর্তনের পর মানুষের মনে গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। তাই ডাকসু নির্বাচনকে গণতন্ত্রে ফেরার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।”
ডাকসুর অতীতও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় চার দশক আগে ভিপি হয়েছিলেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, “দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে ডাকসু নেতৃত্ব পথ দেখিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেখাবে।”
সর্বশেষ ২০১৯ সালের নির্বাচনে ভিপি হন নুরুল হক নূর, যিনি পরে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন এবং জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এর আগে বিভিন্ন সময় ডাকসুর নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, ডাকসু নির্বাচন সার্বিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, জুলাই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা সামনের সারিতে ছিলেন, তাই এই নির্বাচনের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “২০১৯ সালের ডাকসু নেতৃত্ব এসেছে কোটা আন্দোলন থেকে, আর সেই আন্দোলনই ২০২৫ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে। তাই ডাকসু আগামী রাজনীতির বড় নিয়ামক।”
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী পাঁচ মাস পর জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এবারের ডাকসু ভোট সরকারের জন্যও এক ধরনের রিহার্সাল। সে কারণে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সবার নজর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে।