সত্যজিৎ দাস:
বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে তিনি যা অর্জন করেছেন, তা যুগের পর যুগেও অটুট রয়েছে। আজ,৬ সেপ্টেম্বর, তার ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৬ সালের এই দিনে ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ২৫ বছর বয়সী এই তারকা। খবরটি পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, যিনি সবার কাছে পরিচিত হন সালমান শাহ নামে। তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি আগ্রহ ছিল,এমনকি ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পরীক্ষাও পাস করেন। শিশুশিল্পী হিসেবে ১৯৮৫ সালে বিটিভির নাটক পাথর সময় দিয়ে অভিনয়ে প্রথম পদচারণা করেন।
১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে তার। নায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রথম ছবিতেই দর্শকদের হৃদয় জয় করেন তিনি। এরপর মাত্র তিন বছরের মধ্যে ২৭টি সিনেমায় অভিনয় করে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেন।
তার সুপারহিট সিনেমার তালিকায় আছে: তুমি আমার,অন্তরে অন্তরে,সুজন সখি,স্বপ্নের ঠিকানা, তোমাকে চাই,আনন্দ অশ্রু,বিচার হবে সহ অসংখ্য চলচ্চিত্র। প্রতিটি সিনেমায় তিনি ছিলেন ফ্যাশন আইকন,স্টাইলিশ এবং নতুন প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয়।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভোরে নিজের বাসায় সালমান শাহর লাশ উদ্ধার করা হয়। তদন্তে পুলিশের দাবি ছিল আত্মহত্যা। তবে তার পরিবার ও ভক্তরা কখনোই এই ব্যাখ্যা মানেননি। তারা বিশ্বাস করেন,এটি পরিকল্পিত হত্যা। প্রায় তিন দশক পেরিয়ে গেলেও মৃত্যুর রহস্য আজও অমীমাংসিত।
সালমান শাহকে বলা হয় “কালোত্তীর্ণ নায়ক”-যিনি কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না। তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন ও স্টাইল আজও সমান প্রাসঙ্গিক। মৃত্যুর পরও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। বরং পরবর্তী প্রজন্মের নায়করাও তাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া পোড়ামন ২ সিনেমায় সিয়াম আহমেদ তাকে উৎসর্গ করে একটি গান উপহার দেন ‘নাম্বার ওয়ান হিরো’।
সালমান শাহ ছিলেন,আছেন এবং থাকবেন কোটি দর্শকের হৃদয়ে। তাকে ছাড়া বাংলা সিনেমার ইতিহাস কখনোই পূর্ণ হবে না। সত্যিই,তিনি ছিলেন এক ক্ষণজন্মা তারকা। যার মতো আর কেউ ছিলেন না,নেই,আর হয়তো আসবেও না।