মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে ভারতে থেকে ফেরত আনতে আনুষ্ঠানিক আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যার দায়ে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। রায় ঘোষণার সময় তারা দুজনই পলাতক ছিলেন।
রায়ের পর বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্য দেশে আশ্রয় দেওয়া ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞা এবং অবন্ধুসুলভ আচরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। দিল্লিকে অবিলম্বে অভিযুক্তদের হস্তান্তর করার অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরত আনার বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হবে। তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত—এ পরিস্থিতিতে প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হচ্ছে। গত বছরের ডিসেম্বরে পাঠানো প্রথম চিঠির জবাব ভারত দেয়নি।
দিল্লি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি যে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে কিনা। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির কিছু ধারায় ভারত ফেরত না দেওয়ার সুযোগ রাখতে পারে। বিশেষ করে সংশোধিত চুক্তির যে ধারায় বলা আছে—যদি অনুরোধপ্রাপ্ত দেশ মনে করে অভিযোগগুলো ন্যায়বিচারের স্বার্থে আনা হয়নি, তাহলে তারা প্রত্যর্পণ নাকচ করতে পারবে।
ভারতীয় কয়েকজন বিশ্লেষকও মনে করছেন, দিল্লি সম্ভবত হাসিনাকে ফেরত দেবে না। জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত আলজাজিরাকে বলেন, ‘ভারত হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে বলে মনে হয় না।’
হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ভারতের কিছু মহল মৃত্যুদণ্ডের কারণে ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বলে মত দিচ্ছে। আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, ফাঁসির রায় থাকলে ভারত প্রত্যর্পণ এড়াতে পারে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা রায়ের খবর জেনেছে এবং বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক অগ্রগতির স্বার্থে সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে সম্পৃক্ত থাকবে।
ভারতে শেখ হাসিনাকে নিয়ে অবস্থান দুইমুখী।
মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর বলেছে, তারা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী। তবে জুলাই অভ্যুত্থানে অভিযোগিত সহিংসতার বিচার হওয়া জরুরি ছিল।
অন্যদিকে বিজেপি রায়কে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের বয়ানকে সমর্থন করছে।
কলকাতার আইনজীবী এ. জামান বলেন, “বাংলাদেশে গণহত্যা হয়েছে—এটা অস্বীকার করা যায় না।”
তবে মানবাধিকারকর্মীরা ভারতের কাছে পরিষ্কার ব্যাখ্যা চেয়েছেন—শেখ হাসিনা সেখানে আনুষ্ঠানিক আশ্রয়ে আছেন কিনা।

