রাজধানীসহ সারাদেশে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। সাধারণত বর্ষা মৌসুমেই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গেলেও এখন বছরজুড়েই মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও জনসচেতনতার অভাবই ডেঙ্গুর এই অস্বাভাবিক বিস্তারের মূল কারণ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য: ৩০৭ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৭৫ হাজারের বেশি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৭৫ হাজার ৯২৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০৭ জন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সরকারি তথ্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হতে পারে, কারণ অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে তথ্য দেওয়া হয় না।
বিশেষজ্ঞদের মত: প্রশাসনের সমন্বয়হীনতা বড় দায়
কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিত্সকরা মনে করেন, শুধু স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সিটি করপোরেশন নয়— ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে একাধিক মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
তারা বলছেন, ডেঙ্গু এখন ধীরে ধীরে মহামারির দিকে যাচ্ছে। তাই প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় স্থায়ী কমিটি গঠন করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া জরুরি।
গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্তার
আইইডিসিআর-এর সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, বরগুনা জেলায় এডিস মশার ঘনত্বের সূচক ১৬৩.৪—যা বিপদসীমার অনেক ওপরে।
এ থেকে বোঝা যায়, ডেঙ্গু এখন শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চলেও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামে সচেতনতার অভাব এবং চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সীমিত সুযোগই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ
জ্বর হলে দ্রুত NS1 ও CBC পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ. বি. এম. আব্দুল্লাহ বলেন,
“ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্তের সবচেয়ে নিরাপদ সময় হলো জ্বরের প্রথম তিন দিন। এই সময়ে পরীক্ষা ও চিকিৎসা শুরু করলে ঝুঁকি অনেক কমে।”
অন্যদিকে, শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সফি আহমেদ মোয়াজ সতর্ক করেছেন,
“এ বছর শিশুদের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। দেরিতে চিকিৎসা নেওয়ার কারণে শক সিনড্রোমে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে।”
মশা নিধনে সমন্বিত কার্যক্রমের পরামর্শ
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন বলেন, “প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত লার্ভা ধ্বংস ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলছে।”
তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়।
এডিস মশা নিধনে জাতীয় পর্যায়ে স্থায়ী মনিটরিং কমিটি গঠন এবং স্থানীয় প্রশাসনকে সক্রিয় করাই এখন সময়ের দাবি।

