ক্রাইম রিপোর্টারঃ
রাজনীতি এখন আর আদর্শের লড়াই নয়, হয়ে উঠেছে দ্রুত ধনী হওয়ার সবচেয়ে কার্যকর একটি মেশিন। ক্ষমতার কাছাকাছি যেতে পারলেই খুলে যাচ্ছে অবৈধ আয়ের অগণিত দরজা। মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই গড়ে উঠেছে একটি সুসংগঠিত অর্থনৈতিক সিন্ডিকেট, যেখানে জনসেবা নয়, মুখ্য লক্ষ্য টাকা কামানো।
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সংসদ পর্যন্ত—প্রতিটি স্তরে রাজনৈতিক পদ-পদবিকে ব্যবহার করে চলছে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্প লুট, নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রভাব খাটিয়ে অর্থ আদায়ের ভয়ংকর প্রতিযোগিতা।
অনুসন্ধানে আরো দেখা গেছে, রাজনৈতিক পরিচয় মানেই এলাকায় অঘোষিত ক্ষমতা। সেই ক্ষমতার ছায়ায় গড়ে উঠেছে চাঁদা সংগ্রহের নির্দিষ্ট রেট কার্ড। বাজার, পরিবহন, ইটভাটা, বালু-মাটি, ঠিকাদারি—কোনো খাতই এর বাইরে নয়।
এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,চাঁদা না দিলে ব্যবসা বন্ধ, মামলা, মারধর—সবই হতে পারে। এখানে রাজনীতি মানে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলা। তিনি আরো বলেন,সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প এখন রাজনৈতিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস। কাবিখা-কাবিটা, এলজিইডি, পৌরসভা ও ইউনিয়ন প্রকল্পে কাজের চেয়ে কমিশনই মুখ্য। নিম্নমানের কাজ হলেও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় কেউ প্রশ্ন তুলতে সাহস পান না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পের টাকা ভাগ হয়ে যাচ্ছে সভাপতি, ঠিকাদার ও প্রভাবশালী নেতাদের পকেটে—আর জনগণ পাচ্ছে ভাঙাচোরা রাস্তা ও অসম্পূর্ণ উন্নয়ন।
অনুসন্ধানে আরো উঠে এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেই মনোনয়ন হয়ে উঠেছে কেনাবেচার পণ্য। অর্থের জোরে পাওয়া মনোনয়ন পরে সুদে-আসলে তুলে নেওয়ার তাগিদ তৈরি করছে। ফলে নির্বাচনের পর শুরু হয় লুটপাটের প্রতিযোগিতা।
কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী জানান,দলীয় কর্মী পরিচয় ব্যবহার করে দখল, হুমকি ও সহিংসতা এখন নিয়মিত চিত্র। সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা নীরব দর্শক—কারণ প্রতিবাদ মানেই বিপদ।আদর্শ হারিয়ে বিপন্ন গণতন্ত্র।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আদর্শভিত্তিক রাজনীতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় রাজনীতি এখন অনেকের কাছে একটি লাভজনক পেশা। এই অর্থকেন্দ্রিক রাজনীতি গণতন্ত্র, সুশাসন ও রাষ্ট্র কাঠামোর জন্য ভয়াবহ হুমকি। বিশেষজ্ঞরা আরো মনে করেন—রাজনৈতিক অর্থায়নে স্বচ্ছতা, মনোনয়ন সংস্কার, উন্নয়ন প্রকল্পে কঠোর নজরদারি ও দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এই মেশিন বন্ধ করা যাবে না।
নইলে রাজনীতি জনগণের সেবক না হয়ে চিরতরে পরিণত হবে—টাকা কামানোর নিষ্ঠুর এক মেশিন।

