জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের বড় মাঝিপাড়া গ্রামে মাত্র সাড়ে ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় নেমেছে শোকের ছায়া। মা, মেয়ে ও নাতির এমন মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামজুড়ে উদ্বেগ ও নেমেছে নিশ্চুপ নেমে এসেছে শোক।
রোববার (৩০ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সালেহা বেগমের নাতি তুহিন হোসাইন (২৫)। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সকালে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এর কিছুক্ষণ পরই সোমবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে হাসপাতালে মারা যান তার দাদি সালেহা বেগম (৬৫)। মায়ের মৃত্যুর মাত্র ৩৫ মিনিট পর একই হাসপাতালে মারা যান তার মেয়ে বিলকিস বেগম (৩৮)। বিকালে মা ও মেয়ের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতম ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
বিকেলে বড় মাঝিপাড়ায় দেখা যায়, পাশাপাশি রাখা খাটিয়ায় শায়িত মা ও মেয়ের মরদেহ ঘিরে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। বিলকিসের স্বামী ছানোয়ার হোসেন স্ত্রী ও শাশুড়ির মরদেহের পাশে বসে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বাড়ির পাশে চলে কবর খোঁড়ার কাজ যেখানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন মা ও মেয়ে।
নিহত সালেহা বেগম ওই গ্রামের মৃত খাজা মদ্দিনের স্ত্রী। তার মেয়ে বিলকিস বেগম দীর্ঘদিন জর্ডানে ছিলেন; তিন বছর আগে দেশে ফেরেন। তুহিন হোসাইন জয়পুরহাট সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন।
ডায়রিয়া নাকি অন্য কারণ স্বজনদের দাবি বিলকিস, তার মা সালেহা ও শাশুড়ি শেফালী বেগম ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে শেফালী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও বাকি দুজন মারা যান।
তবে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বলছে ভিন্ন কথা। জয়পুরহাট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক জুয়েল বলেন,
“হাসপাতালে মারা যাওয়া দুই নারী ডায়রিয়ায় নয়, শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। তারা ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন না।”
প্রতিবেশী রুবেল হোসেন বলেন, মাত্র সাড়ে ১৭ ঘণ্টায় একই পরিবারের তিনজন চলে গেলেন। দুইজন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন—এমন ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে।”
একই পরিবারের পরপর তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় চরম শোক ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে স্বজন ও গ্রামবাসীরা প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করেছেন।

