সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হবিগঞ্জ রোডস্থ শ্রীশ্রী জগন্নাথদেব আখড়া প্রাঙ্গণে সাত দিনব্যাপী আয়োজিত ১৭তম তারকব্রহ্ম মহানাম সংকীর্তন ও হরিনামযজ্ঞ মহোৎসব ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও শাস্ত্রীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সমাপ্ত হয়েছে।
প্রভাতী নগর পরিক্রমা, পদাবলী কীর্তন,দধিরভাণ্ড ভঞ্জন,মোহন্ত বিদায়,সন্ধ্যারতি এবং ধামাইল কীর্তনের মাধ্যমে উৎসবের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে।
২১-২৭ নভেম্বর পর্যন্ত টানা সাত দিন আখড়া প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকা ছিল ভক্ত-অনুরাগীদের পদচারণায় মুখর। মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে আগত হাজারো পূণ্যার্থী কীর্তন,আরতি ও আলোকসজ্জায় ভরপুর এক আধ্যাত্মিক পরিবেশে অংশ নেন।
মহোৎসবের প্রথম দিন ছিল বিশেষ পূজা,গীতাপাঠ, কীর্তন,ভোগরাগ পরিবেশনা এবং শিশু-কিশোরদের কুইজ ও গীতাশ্লোক প্রতিযোগিতায় উজ্জ্বল। সন্ধ্যায় মঙ্গলদ্বীপ প্রজ্জ্বলন ও সন্ধ্যারতির পর মঞ্চস্থ হয় নাটক ‘শ্রীকৃষ্ণ সুদামা’ এবং ডফযাত্রা ‘মাতৃশক্তি’।
দ্বিতীয় দিনে শাশ্বত পরিবারের গীতাপাঠ, ধামাইল কীর্তন,ভোগরাগ পরিবেশনা ও পুরস্কার বিতরণী ছিল মূল আকর্ষণ। রাতের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা পাঠ।
তৃতীয় দিনে গীতাঙ্গন গোষ্ঠীর গীতাপাঠ ও কীর্তনে দিনটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। রাতে বিশ্বশান্তিকামনায় অনুষ্ঠিত হয় মহাযজ্ঞের শুভ অধিবাস।
চতুর্থ দিন ব্রহ্মমুহূর্তে শুরু হয় ২৪ প্রহরব্যাপী তারকব্রহ্ম হরিনামযজ্ঞ। ভক্তদের অবিরাম নামসংকীর্তন,বিশেষ ভোগরাগ ও সন্ধ্যারতিতে আখড়া প্রাঙ্গণে সৃষ্টি হয় গভীর ধর্মীয় আবহ।
পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিনে ছিল অবিরাম হরিনামযজ্ঞ, বিশেষ ভোগরাগ,মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যারতিতে ভক্তদের ঢল।
সপ্তম দিনের প্রভাতে নগর পরিক্রমার মধ্য দিয়ে নামযজ্ঞের সমাপন ঘটে। সকাল থেকে পদাবলী কীর্তন,দধিরভাণ্ড ভঞ্জন ও মোহন্ত বিদায় অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যার ধামাইল কীর্তন ও আরতির মাধ্যমে সাত দিনের মহোৎসবের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
জগন্নাথ সেবা সংঘের আহ্বায়ক শ্রী লিটন অধিকারী বলেন,
“তারকব্রহ্ম মহোৎসব শ্রীমঙ্গলের অন্যতম শাস্ত্রীয় ধর্মীয় আয়োজন। ভক্তদের আন্তরিকতা ও অংশগ্রহণই এই অনুষ্ঠানকে পবিত্রতার এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। শান্তি,মানবতা ও ভক্তিভাব- এই উৎসবের মূল বার্তা।”
সদস্য সচিব শ্রী সুমন রায় জানান,
“সাত দিনের প্রতিটি পর্ব অত্যন্ত শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। স্থানীয়দের সহযোগিতা,শিল্পীদের অংশগ্রহণ এবং ভক্তদের সমাবেশ মহোৎসবকে সমৃদ্ধ করেছে।”
আয়োজকদের মতে,এ বছরের ১৭তম তারকব্রহ্ম হরিনামযজ্ঞ মহোৎসব শ্রীমঙ্গলের ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। শান্তি, কল্যাণ, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মশুদ্ধির বার্তা ছড়িয়ে আগামী বছর আরও বৃহত্তর আকারে আয়োজনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।

