জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমাগারে দীর্ঘ ৬ মাস ১৫ দিন ধরে পড়ে থাকা এক ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ অবশেষে সৎকার করেছে জেলা কারা কর্তৃপক্ষ। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের মনোহর বাজার শ্মশান ঘাটে মরদেহটি সৎকার করা হয়। এই সময় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
মরহুম ওই ভারতীয় নাগরিকের নাম রাজন (৬৩)। তার পরিবার কিংবা স্থায়ী ঠিকানা কোনোটিই ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করতে পারেনি, ফলে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ ছিল না।
শরীয়তপুর জেলা কারাগার সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা এলাকায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে রাজনকে আটক করে পুলিশ। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
চলতি বছরের ১৮ মে শরীয়তপুর জেলা কারাগারে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। নিয়ম অনুযায়ী ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি সদর হাসপাতালের হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু ভারতীয় দূতাবাস কিংবা রাজনের পরিবারের পরিচয় নিশ্চিত হতে না পারায় মরদেহটি দীর্ঘদিন ধরে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হিমাগারে দীর্ঘমেয়াদে মরদেহ সংরক্ষণে প্রতিদিন আলাদা ব্যয় হয়-বিদ্যুৎ রক্ষণাবেক্ষণ,নিরাপত্তা,পেশাদার কর্মীর তত্ত্বাবধান, এসব মিলিয়ে ৬ মাস ১৫ দিনে সরকারের ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। হাসপাতাল সূত্র বলছে, সাধারণত দীর্ঘদিন অরক্ষিত মরদেহ রাখা হয় না; তবে কনস্যুলার প্রটোকল যুক্ত থাকায় এই ক্ষেত্রে অপেক্ষা করতে হয়েছে।
জেল সুপার বজলুর রশিদ জানান, বিষয়টি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ ভারতীয় উচ্চ কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছিল। দূতাবাসের নথিপত্র যাচাই, পরিচয় নিশ্চিতকরণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বেশ সময় লেগে যায়।
সাম্প্রতিক বাংলাদেশ–ভারত সচিব পর্যায়ের কনস্যুলার বৈঠকে রাজনের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে উভয়পক্ষ সম্মত হয় যে মরদেহ বাংলাদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে নিয়ম অনুযায়ী সৎকার করা হবে।
তার ভাষায়,দূতাবাস ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুপারিশ অনুযায়ী মরদেহটি আজ সৎকার করা হয়েছে। সরকারি ব্যয়ে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্মকর্তারা সৎকার কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন,শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট,জেলা কারাগারের কর্মকর্তারা,সদর হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ও
স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, বিদেশি নাগরিকের স্বজনহীন মরদেহ নিয়ে সৎকারের মতো দায়িত্ব রাষ্ট্রের জন্য সংবেদনশীল। তাই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়েছে।

