রিপন মারমা (রাঙ্গামাটি):
উচ্চফলনশীল ও পুষ্টিগুণে ভরপুর লাউয়ের নতুন জাত ‘বারি লাউ-৪’ (BARI Lau-4) চাষে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে রাইখালী পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি কৃষকের বাতিঘর হিসাবে পরিচিত। এই গবেষণা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রদর্শনী প্লটে এই লাউয়ের বাম্পার ফলন শুধু গবেষক ও কৃষকদেরই নয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেও নতুন করে আশান্বিত করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সফলতা পাহাড়ী এলাকার কৃষকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এক নতুন দুয়ার খুলে দেবে।১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গবেষণা কেন্দ্রে ইতিমধ্যে ২১ টি সবজি এবং ফলের জাত উদ্ভাবন করে কৃষি সেক্টরে বৈপ্লবিক পরিবর্তন তারই ধারাবাহিকতায় এবার বারি লাউ – ৪ জাতের একটি সবজি পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে দেবার জন্য এর প্রজনন বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকের দৌঁড় গৌঁড়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছে এখানকার কৃষি বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর হতে গবেষণা কেন্দ্রের ১ একর জায়গা জুড়ে এর চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে । এর বীজ বপন করার ৭০ দিনের মধ্যে প্রতিটি গাছে ফলন ধরেছে ।
গবেষণা কেন্দ্রে সারি সারি লাউ গাছে লাউ ঝুলে আছে। গবেষণা কেন্দ্রে পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুল হাসানের সাথে তিনি বলেন,
পাহাড়ী অঞ্চলে লাউ চাষে সাধারণত ফলন কম হয় এবং রোগবালাইয়ের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এই সমস্যাগুলো সমাধানেই কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ‘বারি লাউ-৪’ নিয়ে পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করা হয়।তিনি আরও বলেন,বারি লাউ-৪ এ জাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাপ সহনশীল এবং সারা বছর চাষ করা যায়। পার্বত্য অঞ্চলে চাষের জন্য উপযোগী একটি জাত। গাঢ় সবুজ রঙের ফলের গায়ে সাদাটে দাগ থাকে।
গাছ প্রতি ১০-১২ টি ফল পাওয়া যায় এবং ফলের গড় ওজন ২.৫ কেজি। ফল লম্বায় ৪২-৪৫ সেন্টি মিটার এবং ব্যাস ১২-১৩ সেন্টি মিটার। চারা রোপণের ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। জীবনকাল ১৩০ হতে ১৫০ দিন। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৮০ হতে ৮৫ টন। জাতটি তাপ সহিষ্ণু হওয়ায় গ্রীষ্মকালে চাষ করে কৃষক লাভবান হতে পারে। বাংলাদেশের সব এলাকায় এ জাতটি চাষ করা যায়। গ্র্রীষ্মকালে চাষের জন্য ফাল্গুনের শেষে আগাম ফসল হিসেবে চাষ করা যায়। চৈত্র মাসে বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে চারা রোপণ করা যায়। আমরা লাউ চাষ করে সাধারণত তেমন লাভ করতে পারতাম না। কিন্তু রাইখালী গবেষণা কেন্দ্রের দেখানো পদ্ধতিতে এই ‘বারি লাউ-৪’ চাষ করলে আমাদের ভাগ্য বদলে যাবে। লাউগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এর ফলনও অবিশ্বাস্য!”
তিনি আরও বলেন,গবেষণাকেন্দ্রের এই সাফল্যকে মডেল হিসেবে ধরে শীঘ্রই পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ী এলাকায় ‘বারি লাউ-৪’ এর বীজ ও চাষাবাদের পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পাহাড়ী কৃষকরা শুধু নিজেদের পুষ্টির চাহিদাই মেটাতে পারবে না, বরং বাড়তি ফলন বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারবে।
এসময় কথা হয় রাইখালী ইউনিয়নে জগনাছড়ি কৃষক পাইসুইউ মারমা সাথে তিনি বলেন, আমরা লাউ চাষ করে সাধারণত তেমন লাভ করতে পারতাম না। কিন্তু রাইখালী গবেষণা কেন্দ্রের দেখানো পদ্ধতিতে এই ‘বারি লাউ-৪’ চাষ করলে আমাদের ভাগ্য বদলে যাবে।লাউগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি এর ফলনও অবিশ্বাস্য!”তবে পাহাড়ি কৃষি গবেষণায় খুব ভাল। আমার বাড়ি পাশে এই প্রতিষ্ঠানটি আমি প্রতিনিয়ত ওখান থেকে চারা নিয়ে থাকি। গত মাসে আমি এই গবেষণা কেন্দ্র হতে বারি লাউ – ৪ এর বীজ ও সার নিই। তাঁরা আমাকে বিনামূল্যে এইগুলো দেন। এক বিঘা জমিতে আমি এর চাষ করি। বর্তমানে চারা গুলো অনেক বড় হয়েছে। আশা করি ভালো ফলন হবে।

