এক সময় ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির পরিচিত মুখ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে। যদি নয়াদিল্লি তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠায়, যে কোনো সময় এই রায় কার্যকর হতে পারে।
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমন–পীড়নের অভিযোগে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে তার সরকার পতিত হয়। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনের পর তার নেতৃত্ত্ব ধীরে ধীরে কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠে, যা শেষ পর্যন্ত তার ভারতে নির্বাসনে চলে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। ১৯৭৫ সালের আগস্টে তার বাবা, মা ও ভাইদের নিহতের পর ছয় বছরের বাধ্যতামূলক নির্বাসনে চলে যান তিনি। দেশে ফিরে ১৯৮১ সালে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ এবং পরবর্তী দশকে ক্ষমতার শীর্ষে উঠা তার রাজনৈতিক কাহিনীকে মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করেন। ২০০৮ সালে আবার সরকার গঠনের পর তিনি কঠোর, সতর্ক এবং নিজের অবস্থান অটুট রাখার জন্য পরিচিত হন। তার শাসনামলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটে এবং ভারত–বাংলাদেশ সহযোগিতা দৃঢ় হয়। তবে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এবং একদলীয় শাসনের প্রবণতা দেশ–বিদেশে সমালোচনা বাড়ায়।
সাবেক সরকারের পতন ঘটে ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর, যেখানে অন্তত ১৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এই সহিংসতার ফলে জনগণ এবং নিরাপত্তা বাহিনী পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভারত এখনও তাকে ফেরত দেয়নি এবং রাজনৈতিক কারণে তাড়াহুড়ো করছে না। দুই দেশের প্রত্যর্পণ চুক্তিতে ‘রাজনৈতিক অপরাধের’ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার তাকে বিলম্ব না করে হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে।
শেখ হাসিনার বিদায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুন অন্ধকার অধ্যায়ে প্রবেশ করাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ হয়তো পুনরায় ক্ষমতায় আসবে, তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নয়।

