বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ১০ শতাংশ হারে নগদের চাহিদা বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে একই প্রবণতা চলতে থাকায় এবার তা ভাঙতে এবং লেনদেনের স্বচ্ছতা বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন একীভূত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
আজ সোমবার রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে আয়োজিত ‘স্টেকহোল্ডার ডিসকাশন অন ইন্টারঅপারেবল পেমেন্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় বিষয়টি তুলে ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর জানান, দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান—ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা এবং আসন্ন ডিজিটাল ব্যাংক—এই একক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো সময় তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, “আগেও এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তবে সফল হয়নি। এবার আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কার্যকর সিস্টেম চালুর চেষ্টা করছি।” এ উদ্যোগে গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
নগদ অর্থের চাপ কমানো জরুরি
আহসান এইচ মনসুর জানান, নগদনির্ভর অর্থনীতি দেশের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেবল ব্যাংক খাতেই প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। পাশাপাশি নগদ লেনদেনের কারণে সরকার প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই ধাপে ধাপে নগদ ব্যবহার সীমিত করে ডিজিটাল পেমেন্টে যেতে হবে।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোই লক্ষ্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৬৪ শতাংশ মানুষ আর্থিক খাতের আওতায় এসেছে। তবে এখনো প্রায় ৩৫–৪০ শতাংশ জনগণ বাইরে রয়ে গেছে। গভর্নর বলেন, শুধু সংখ্যা বাড়ানো নয়, বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এজন্য সব লাইসেন্সধারী দোকানে কিউআর কোড বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে নগদ তোলা ছাড়াই ডিজিটাল পেমেন্ট করা যায়।
নারী এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অগ্রাধিকার
গভর্নর জানান, এজেন্ট ব্যাংকিং খাতে অন্তত ৫০ শতাংশ নারীকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, গ্রামীণ পরিবারের নারীরা সহজেই অন্য নারী সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি আরও বাড়বে।
নতুন সিদ্ধান্ত ও পরিবর্তন
ক্রেডিট কার্ড গ্রহণে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার শর্ত তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে কার্ড ব্যবহারে গতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমএফএস খাতে ঋণের সীমা বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়ানো হবে। ক্ষুদ্রঋণ খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর না করলে দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না বলেও মন্তব্য করেন গভর্নর।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বক্তব্য দেন ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী, গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি এবং আইএফএস বাংলাদেশের প্রধান স্নিগ্ধা আলী।
 
			 
			






