ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক রাজনৈতিক অস্থিরতা, কূটনৈতিক টানাপড়েন ও পারস্পরিক বিবাদে জর্জরিত। তবে অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, বাণিজ্য ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ভারতের প্রভাব এখনও অক্ষুণ্ণ।
খাদ্যশস্য, তুলা, সুতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভূ-অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সীমান্তঘেরা অবস্থান এবং খাদ্য ও জ্বালানি আমদানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে ভারতীয় প্রভাব আরও দৃঢ় হয়েছে।
শেখ হাসিনার পতনের পরও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রবাহ স্থিতিশীল থাকে। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে প্রায় ১,১৪৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের ১,১০৭ কোটি ডলারের তুলনায় ৩.৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় আমদানির গুরুত্ব স্পষ্ট। পেঁয়াজ ও চালের বাজারে ওঠানামা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পেঁয়াজের আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২১১ কোটি ডলার, চালের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হয়েছে ৩৬১ কোটি ডলার।
তুলা ও সুতা আমদানিতেও ভারতের প্রভাব অক্ষুণ্ণ। তুলার আমদানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮০৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের ২,৩৬৯ কোটি ডলারের তুলনায় ১৮.৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুতা আমদানিও অব্যাহত রয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও ভারতীয় নির্ভরশীলতা রয়ে গেছে। বাংলাদেশ প্রায় ১,৭৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রতিদিন ভারত থেকে আমদানি করছে, যা মোট চাহিদার ১৫ শতাংশের বেশি। বিভিন্ন জ্বালানি ঘাটতি ও সীমিত বিদ্যুৎ সক্ষমতার কারণে ভারতীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের গ্রিডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মন্তব্য করেছেন, “বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কিছু দিক পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। বাণিজ্য চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে চলে, তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমস্যা এই সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।”