দুই দিনের ব্যবধানে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় জনমনে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি কম্পনের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদী এবং একটি ঢাকার কাছাকাছি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় শনাক্ত হওয়া একটি ‘গোপন ভূ-চ্যুতি’র কারণে বাংলাদেশে ৯ মাত্রার মতো বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার ও শনিবারের কম্পন: শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যার উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী। উৎপত্তিস্থলের গভীরতা মাত্র ১০ কিলোমিটার হওয়ায় ঝাঁকুনি ছিল অত্যন্ত তীব্র। এ ভূমিকম্পে শিশুসহ ১০ জন নিহত এবং ৬ শতাধিক মানুষ আহত হন। এর পরদিন শনিবারও দিনের বিভিন্ন সময়ে আরও তিনবার মৃদু কম্পন অনুভূত হয়।
বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী নরসিংদীকে এই ভূমিকম্পগুলোর উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “এক সপ্তাহের মধ্যে আরও ২০ বার এমন কম্পন হতে পারে। যদি ৫.৭ মাত্রার চেয়েও বড় কোনো ভূমিকম্প হয়, তাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভয়াবহ দুর্যোগ হতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত, ইউরেশিয়া ও বার্মা—মোট তিনটি টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ।
প্লেট সংঘর্ষের ঝুঁকি: ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের রুবাইয়াত কবির জানান, প্লেটগুলো এখন ‘আটকানো অবস্থা থেকে খুলে যাচ্ছে’। যদি ভারতীয় প্লেট ইউরেশীয় প্লেটের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটায়, তাহলে বাংলাদেশ মারাত্মক ভূমিকম্প ঝুঁকিতে পড়বে।
৯ মাত্রার ঝুঁকি: কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় একটি ‘গোপন ভূ-চ্যুতি’ (ফল্ট) শনাক্ত করা হয়েছে, যা বাংলাদেশে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সিলেট-টেকনাফ ফল্ট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বিস্তৃত প্লেট সংযোগস্থলে গত ৮০০ থেকে হাজার বছরের মধ্যে কোনো শক্তি মুক্ত হয়নি। তিনি এই অঞ্চলকে ‘রিং অব ফায়ার’-এর মতোই বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ ঘোড়াশালের ফাটল থেকে সংগ্রহ করা মাটির নমুনা পরীক্ষা করছে। বিভাগের সাবেক অধ্যাপক আ স ম ওবায়দুল্লাহ জানান, নমুনা পরীক্ষা করে ভূমিকম্পের গভীরতা ও প্রকৃতি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে টেকনাফ-মিয়ানমার ফল্ট লাইনে ১৭৬২ সালে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল, যার ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপ ৩ মিটার উপরে উঠে আসে। সেখানে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় হচ্ছে। প্লেটের চলনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।







