ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন, “যারা এই ষড়যন্ত্রে জড়িত, তারা যেখানেই থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
ভাষণের শুরুতেই অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক ও বেদনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আজকের এই বিজয়ের আনন্দঘন দিনে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি অত্যন্ত ব্যথিত হৃদয়ে। গভীর বেদনার সঙ্গে জানাতে হচ্ছে—জুলাই অভ্যুত্থানের সম্মুখযোদ্ধা এবং ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর যে নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা কেবল একজন ব্যক্তির ওপর আঘাত নয়। এটি বাংলাদেশের অস্তিত্বের ওপর আঘাত, আমাদের গণতান্ত্রিক পথচলার ওপর সরাসরি আঘাত।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, হামলার পর থেকে শরীফ ওসমান হাদি সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার চিকিৎসা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “আমি দেশবাসীর কাছে অনুরোধ জানাই—আপনারা হাদির জন্য মহান আল্লাহতালার কাছে অন্তরের অন্তস্তল থেকে দোয়া করুন।”
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, সরকার এই ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমি দেশবাসীকে আবারও আশ্বস্ত করতে চাই—এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, তাদের কাউকেই আইনের আওতার বাইরে রাখা হবে না।”
ভাষণে তিনি পরাজিত শক্তিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “পরাজিত ফ্যাসিস্ট টেরোরিস্টদের এই অপচেষ্টা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ করে দেওয়া হবে। ভয় দেখিয়ে, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে কিংবা রক্ত ঝরিয়ে এই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না।”
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে সংযম ও ঐক্য। অপপ্রচার কিংবা গুজবে কান দেবেন না। যারা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, যারা ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে আবার অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়—আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের মোকাবিলা করব।”
তিনি আরও বলেন, “পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি এ দেশের পবিত্র মাটিতে আর কোনোদিন ফিরে আসতে পারবে না। জনগণের ঐক্য ও গণতান্ত্রিক চেতনার কাছে তাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে।”
ভাষণের শেষাংশে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাষ্ট্র ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং কোনোভাবেই বিভ্রান্তি বা উসকানির ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।

