অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে দীর্ঘদিনের জমিজমা–সংক্রান্ত জটিলতার জেরে স্থানীয় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আবারও বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে কমলনগর থানায় মামলা নং ১২–এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তবারক আলীর ছেলে আবদুল হক বাদী হয়ে একই এলাকার আব্দুল আলী, ডাক্তার বেলাল হোসেন, নুরুল হক মাঝি, আব্দুল মালেক, নূর হোসেন ও মো. সুমনকে বিবাদী করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মামলা দায়েরের পর থেকেই বিষয়টি এলাকাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা–সমালোচনা তৈরি করেছে। অভিযোগ উঠেছে, এটি নাকি জমি–সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে দায়ের করা “মিথ্যা মামলা”। তবে বাদীপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
* বহুদিনের বিরোধের জেরে উত্তেজনা
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। একাধিক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। সামাজিকভাবে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, বিরোধকে কেন্দ্র করে মামলার ঘটনা নতুন নয়; আগেও বিভিন্ন সময়ে মামলা–হামলার ঘটনা ঘটেছে।
* বাদী ও সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা দাবি করেন, বাদী আবদুল হক পেশায় স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের পিয়ন হলেও তিনি নানা কারণে এলাকায় প্রভাব খাটান। তাদের অভিযোগ, আবদুল হকের সঙ্গে কামাল উদ্দিনের স্ত্রী কোহিনুর বেগম, শারমিন আক্তার, রেশমা আক্তার, সাইদুর রহমান ও আজগর হোসেনসহ আরও কয়েকজন নিয়মিত বিরোধে জড়িত এবং প্রভাব খাটিয়ে মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করেন।
তবে এ বিষয়ে বাদীপক্ষ কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
* ইউপি সদস্যের মন্তব্য
তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মতিন মেম্বার বলেন,
“এদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা বহুবার সালিশ বৈঠকে বসেছি। কিন্তু সমস্যা সমাধানে তারা সহযোগিতা করে না। সালিশে বসে উঠে চলে যায়—ফলে কেউ আর সালিশ করতে চায় না।”
তবে তিনি একই সঙ্গে বলেন, “সত্যতা যাচাই করে আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীরই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”
* কোহিনুর বেগমকে নিয়ে অভিযোগ
স্থানীয় মুর্শিদা বেগম নামের এক নারী প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করেন,
“কোহিনুর বেগমের স্বভাব খারাপ—মানুষকে সম্মান করে কথা বলেন না। তিনি আগেও নিজেকে আঘাত করে অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে কোহিনুর বেগমের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
* ডা. বেলালকে মামলায় আসামি করায় ক্ষোভ
মামলার বিবাদীদের মধ্যে আছেন তোরাবগঞ্জ বাজারের দীর্ঘদিনের পুরোনো ব্যবসায়ী ও চিকিৎসাসেবক হিসেবে পরিচিত ডাক্তার বেলাল হোসেন। এলাকাবাসীর একাংশ দাবি করছেন, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না, বরং বাজারের নিজস্ব চেম্বারে রোগী দেখছিলেন। তাদের মতে, “অহেতুক হয়রানি” করতেই তাকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
একজন ব্যবসায়ী জানান,
“ডা. বেলাল বহু বছর ধরে এলাকায় সুনামের সঙ্গে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন। তাকে মামলায় জড়ানো অন্যায় হয়েছে।”
এ বিষয়ে ডা. বেলাল বলেন,
“আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। কেন আমাকে এই মামলায় আসামি করা হলো তা বুঝতে পারছি না। বিষয়টি আমি আইনগতভাবে মোকাবিলা করব।”
* আসামিদের দাবি — ‘মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে’
মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জানান, জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধের সুযোগে তাদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলা করা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, “আগেও প্রতিপক্ষ নানা সময়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করার চেষ্টা করেছে।”
একজন বিবাদী বলেন,
“এই মামলা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। আমরা ন্যায়বিচারের জন্য আদালতের দারস্থ হব।”
* এলাকাবাসীর দাবি — মামলা প্রত্যাহার হোক
বিবাদী ও বাদীপক্ষের বিরোধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তিও কম নয়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, বারবার মামলা–হামলা চলায় এলাকায় অস্থিরতা তৈরি হয়। তারা চান, বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে সত্য–মিথ্যা নির্ণয় করা হোক।
এলাকার প্রবীণরা জানান,
“বারবার মামলা হলে সমাজে অশান্তি বাড়ে। প্রশাসন তদন্ত করে দেখুক—মিথ্যা হলে মামলা প্রত্যাহার করা উচিত, আর সত্য হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হোক।”
* পুলিশের বক্তব্য
কমলনগর থানার এক কর্মকর্তা জানান,
“মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারও বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেটিও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হবে।”
* সামাজিক শান্তি ফিরিয়ে আনার দাবি
স্থানীয়দের মতে, জমি–সংক্রান্ত এই দীর্ঘদিনের জটিলতা সমাধানের জন্য প্রয়োজন সঠিক তথ্য যাচাই, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা। বারবার মামলা–হামলা ও উত্তেজনার ফলে এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
তারা আশা করেন, প্রশাসন সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উন্মোচন করবে এবং দীর্ঘদিনের অস্থিরতা দূর হবে।

