জামিউল ইসলাম তুরান,শান্তিগঞ্জ প্রতিনিধঃ
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ফুশিয়ার মিয়া নামের একজন সিএনজি চালকের বসত ঘর ভষ্মিভুত হয়েছে। ক্ষতি হয়ে ৫ লক্ষাধিক টাকা। বুধবার ভোররাতে ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া পয়েন্ট সংলগ্ন ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে।
ফুশিয়ার মিয়া ধারণা করেন, ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, একটি বিয়ের দাওয়াতে তার স্ত্রী সন্তান বাড়িতে ছিলেন না। প্রতিদিনের মতো তিনি একাই ঘরে ঘুমে ছিলেন। ভোর রাতে সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বাজারে আসার পর তার কাছে খবর যায় যে, তার ঘরে আগুন লেগেছে। বাড়িতে আসতে আসতে ভোরের আলো ফুটেছে। ততক্ষণে দাও দাও করে জ্বলতে শুরু করে আগুনের লেলিহান শিখা। ঘর থেকে একটি কাগজের টুকরাও বের করা সম্ভব হয়নি। তিনি ধারণা করেন, ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
ফুশিয়ার মিয়া বলেন, আমি ভোরে বাড়ি থেকে যাওয়ার পর খবর পাই যে, আগুন লেগেছে। এসে দেখি আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমার সব শেষ। প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। জরুরি কাগজপত্রসহ সবকিছু শেষ।
স্থানীয়রা জানান, ভোড় রাতে হঠাৎ চিৎকার শোরগোল শুনে তারা দৌঁড়ে এসে দেখেন আগুন আশাকচুম্বী। নিয়ন্ত্রেণের বাইরে। কিছু ছেলেরা দুঃসাহস দেখিয়েছেন। পাশের বাড়ির ছাদে উঠে ট্যাংকির পানি ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন । শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে কল দেওয়া হলে তারা দেরিতে এসেছেন। তখন স্থানীয়রা আগুন নিভিয়েছেন এবং সবকিছু পড়ে শেষ হয়েছে। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিস আসারপরও তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছেন।
আগুনের নেভানোর কাজে সক্রিয় ছিলেন পাড়ার সবাই। সুনু মিয়া, রুশেল মিয়া, এমরুল হক ও তুষার আব্দুল্লাহসহ বাকী সবাই এগিয়ে না এলে আগুন আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তো। তবুও ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে পাশে থাকা দুটি পাকা বাড়ি। একটি হচ্ছে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক শুকুর আলী ও পরিবহণ শ্রমিক নেতা আবদুল গফুরের বাড়ি। আগুনের তীব্রতায় বাড়িগুলোর দেয়ালের আস্তরণ উঠে গিয়েছে।
শুকুর আলী বলেন, আমার চাচাতো ভাই ফুশিয়ার মিয়া। সে এমনিতেই পরিশ্রমী মানুষ। খুব কষ্ট করে সংসারটাকে টেনে নিচ্ছে। তার জীবনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।
তিনি বলেন, আমি তাহিরপুরে ছিলাম। খবর পেয়ে খুব সকালে আমি এসেছি। আমার ঘরে এসে আগুন ঢুকেছে। দেয়াল দেয়াল ফেটে গিয়েছে। আস্তরণ উঠে গেছে। আমার আর আমার অপর ভাই আবদুল গফুরের ঘরের খুব ক্ষতি হয়েছে।
সুনু মিয়া বলেন, আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম। ফায়ার সার্ভিসকে কল দেওয়ার পর তারা প্রায় আধাঘন্টা পরে এসেছেন। অথচ শান্তিগঞ্জ থেকে পাগলা ১০ মিনিটের রাস্তা। তারা আসারপরও কাজ শুরু করতে পারেননি। তাদের মেশিন নাকি বিকল ছিলো। অথচ তারা একটু সক্রিয়তা দেখালে ঘরটি রক্ষা পেতে পারতো।
শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. ফরিদ মিয়া বলেন, আমাদেরকে যখনই জানানো হয়েছে তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছি। কোনো দেরি করিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনছেন স্থানীয়রা। যে পুকুর থেকে দমকল বসানো হয়েছে সেখানে সুবিধাজনক স্থান ছিলো না। আমাদের প্রস্তুতি নিতে যে সময় লেগেছে এই সময়টাকেই তারা বলছেন দেরি হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়েই উপজেলাবাসীর সেবা করার চেষ্টা করি।

