শীত শুরুতেই বানিয়াচংয়ে শিকারির ফাঁদে অতিথি পাখি ′ নির্দয় পাখি শিকারী নিরব প্রশাসন’!
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :
শীত শুরুতেই প্রতি বছরের ন্যায় এবারও নাম না জানা হাজারো রঙ-বেরঙের অতিথি পাখির কলকাকলীতে প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে হবিগঞ্জের হাওর-বাওর, খাল-বিল, নদী, পুকুর, জলাশয় ও জলাবনগুলো।
জেলার নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিদিন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকার করে বিক্রি হচ্ছে। প্রকৃতির প্রাণ এসব পাখি অবাধে শিকার এবং বিক্রি করলেও প্রশাসনের কোনো নজরদারি না থাকার কারণে বিভিন্ন জলাশয়ে মাছ শিকার করতে আশা পাখিরা নির্বিচারে শিকারির জালে ধরা পড়েছে। এ যেন ′নির্দয় পাখি শিকারী নিরব প্রশাসন’!
অসাধু পাখি শিকারিদের কারেন্ট জাল, পাতানো ফাঁদ এবং শখের শিকারিদের বন্দুকের গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে প্রকৃতিতে আসা অতিথি পাখিদের। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পাখি শিকার নিষিদ্ধ হলেও অবাদে চলছে অতিথি পাখি শিকার।
শীতের মৌসুমে আসা পাখিদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, পাতিহাঁস, লেজহাঁস, পেরিহাঁস, চমাহাঁস, জলপিপি, রাজসরালি, লালবুবা, পানকৌড়ি, বক, শামুককনা, চখপখিম সারস, কাইমা, শ্রাইক, গাঙ কবুতর, বনহুর, হরিয়াল, নারুন্দি, মানিকজোড়া অন্যতম।
সচেতন মহলের লোকজন জানান, সঠিক নজরদারি এবং সচেতনতার অভাবে বাড়ছে পাখি শিকার। এতে নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। নদী-নালা ও বিভিন্ন জলাশয়ের পানি কমতে শুরু করেছে। এ সময় জলাশয় ও আমন ধানের জমিতে মাছ ও পোকা খেতে ভিড় জমানো বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শিকারিদের জালে ধরা পড়ছে। ফাঁদে ধরা পাখি স্থানীয় হাটবাজারে ফেরি করে বিক্রি করতে দেখা যায়। এতেই বুঝা যায় ′নির্দয় পাখি শিকারী নিরব প্রশাসন’!
রোববার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকা সিলেট মহাসড়ক সহ কয়েটি উপজেলার হাট বাজারের খবর নিয়ে জানা যায়, শীতের শুরুতেই পাখি শিকারীরা তাদের পুরোনো পেশায় জড়িয়ে পরেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বানিয়াচংয়ের বড় বাজারে একজন পাখি বিক্রেতা ফেরি করে বকসহ নানা জাতের পাখি বিক্রি করতে দেখা যায়।
এ সময় এক পাখি বিক্রেতা জানান, পাখি শিকারিদের কাছ থেকে কিনে এনে বিক্রি করছেন। পাখি শিকার ও বিক্রি এটা যে দণ্ডনীয় অপরাধ জেনেও তিনি জীবিকার প্রয়োজনেই বাধ্য হয়ে বিক্রি করছেন বলে দাবি করেন। তিনি জানান, মানুষ প্রতিদিন কয়েকশত বক ফাঁদ পেতে ধরছেন। ওই পাখি তার মতো অনেকেই কিনে বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে ফেরি করে বিক্রি করছেন।
আবিদুর রহমান নামের এক যুবক জানান, একশ্রেণির লোভী মানুষ এলাকার বিভিন্ন খাল-বিলে নানাভাবে পাখি শিকার করে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছে। এদের থাবা থেকে আমাদের জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার জন্য পাখি বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।
শিক্ষক আবুল মনছুর তুহিন বলেন, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্ধে সামাজিক আন্দোলন আজ বেশি প্রয়োজন। কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তা প্রয়োগ করছে না।
বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় পাখি শিকার বন্ধে জনগণকে নানাভাবে সচেতন করা হচ্ছে। পাখি শিকার ও বিক্রি রোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, ১ বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান থাকলেও মৌসুমী পাখি শিকারিদের পাখি শিকার থামছে না। শীত এলেই এক শ্রেণির অসাধু মানুষ হত্যা করছে এই পরিযায়ী পাখিগুলোকে।