মোঃ রাহাদ আলী সরকার-মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি প্রতিনিধি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেমিস্টার ফি কমানোর ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে আশানুরুপ হারে না কমায় শিক্ষার্থীরা তা প্রত্যাখ্যান করে সেমিস্টার ফি না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সেমিস্টার ফি কমানোর কথা বলা হয়।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, তাদের দাবি অনুযায়ী সেমিস্টার ফি অবশ্যই কমাতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি কমানোর কথা জানানো হয়েছে। সে অনুযায়ী, অন্তত ২০ শতাংশ কমিয়ে ৪ বছরে বিএসসি ইন ওশানোগ্রাফি প্রোগ্রামের জন্য ৯৩ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হবে।
এ ছাড়া বিএসসি ইন মেরিন ফিশারিস প্রোগ্রামের জন্য ৯৩ হাজার, বিএসসি ইন নেভাল আর্কিটেকচার প্রোগ্রামের জন্য ৯২ হাজার ৭৫০, বিবিএ ইন পোর্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক প্রোগ্রামের জন্য ৮২ হাজার ৫৫০ এবং এলএলবি ইন মেরিটাইম ল’ প্রোগ্রামের জন্য ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
পরিবর্তিত ফি নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইউজিসির আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাস-পরিক্ষায় ফিরে আসে। এখন তাদের আশ্বাসের পূর্ণ প্রতিফলন পরিবর্তিত সেমিস্টার ফি-তে দেখা যাচ্ছে না।
পরিবর্তিত যে ফি সেটি এখনো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি উল্লেখ করে শিক্ষার্থীরা আরো বলেন নতুন সেমিস্টার ফি কাঠামো আগের সেমিস্টার ফি’র তুলনায় সামান্য কম। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় কিংবা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইউজিসির সঙ্গে সভার পর তাদের বলা হয়েছে, সেমিস্টার ফি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় হওয়ায় তাদের কিছু করার নেই। সেদিক বিবেচনায় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি বাজেটের অন্যান্য খাতের সাথে সমন্বয় করে সেমিস্টার ফি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, সেমিস্টার ফি কমানো হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৫৭ লাখ টাকা রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত বাজেটের অধিন টিএ/ডিএ, পারিতোষিক, শিক্ষা সফর, বইপত্র, অনুষ্ঠান ইত্যাদি খাত থেকে সমন্বয় করার প্রয়োজন হবে। এতে করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুবিধায় ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পরিবর্তিত সেমিস্টার ফি প্রত্যাখ্যান করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্যাডে প্রকাশিত বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা বলেছেন-
১. শিক্ষার্থীরা পুনঃনির্ধারিত সেমিস্টার ফি বর্জন করছি এবং কেউই ফি প্রদান করবে না।
২. আসন্ন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে অংশগ্রহণ করবে। পরীক্ষায় বসা নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হলে শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
৩. যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য যেকোনো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে তারা প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ৩৭ তম পাবলিক ও মেরিটাইম বিষয়ক একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এক দশক আগে যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির।অনেক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে গেলেও কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সাথে মৌলিক দুরত্ব রয়ে গেছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যহীন বাংলাদেশের অংশ হিসেবে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছিলো।এর মধ্যে অন্যতম দাবি ছিলো অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে সেমিস্টার ফি নির্ধারণ করা।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন,ইউজিসির সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে।সর্বশেষ ইউজিসি অভিমুখে “লং মার্চ” করার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন,ইউজিসি ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়।সেখানে শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ফি ও অন্যান্য দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করা হয়।