শাহাদাৎ বাবু, নোয়াখালী সংবাদদাতা
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয় নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কালের বিবর্তনে আজ প্রায় ধ্বংসের পথে। ইতিহাসের সাক্ষী পুরোনো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ থাকলেও, কালের বিবর্তনে অযত্ন অবহেলায় বিদ্যালয়টি তার সেই চাকচিক্যময় জৌলুস হারিয়ে আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এমন সংকট উত্তরণে বিদ্যালয়ের হারানো জৌলুস স্ব-গৌরবে ফিরে পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় শিক্ষানুরাগী সচেতন সমাজ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে আয়োজিত রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের নেতা, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন গুণী শিক্ষার্থীরা এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্যকে সমুন্নতভাবে সমৃদ্ধ করার দাবী জানান।
১৯৬০ সালে বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার ও সোনাইমুড়ী উপজেলার কৃতি সন্তান প্রয়াত আবুল খায়েরের হাত ধরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়।
যেখানে একসময় হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর কলকাকুলি আর পদচারণায় মুখরিত ছিলো এ অঞ্চলের প্রাণের বিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস। সেখানে আজ নিরবতায়-নিস্তব্ধ খাঁ খাঁ করছে বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ, নেই ছাত্র ছাত্রীর পাঠদানের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা। জরাজীর্ণ কক্ষে কোনোমতে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের উদাসীনতায় কিছু কিছু শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতাসহ অভিভাবকদের অসচেতনতায় শিক্ষার্থীদের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নেমে এসেছে বিপর্যয়। এমন ফলাফলে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা হয়েছে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবক সমাজের। অথচ এর আগে এই প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এখান থেকেই জ্ঞান বিজ্ঞানের শিক্ষা অর্জন করে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হয়ে দেশ গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে।
জানা যায়,স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ের ১৯৬০ সালে বৃহত্তর নোয়াখালীতে হাতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ছিল নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠালগ্নের শুরু থেকে আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানীর নিজস্ব তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো এ প্রতিষ্ঠান। ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো বিদ্যালয়টির শ্রেণী পাঠদান, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সকল কার্যক্রম। জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন স্কুলের সাথে প্রতিযোগিতায় বেশ এগিয়ে থাকা গৌরবোজ্জ্বল এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে বেহাল করুণ দশায় অবতীর্ণ। যার কারণ হিসেবে বিদ্যালয়টির সাথে যুক্ত থাকা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি কুচক্রী মহল নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থের লক্ষ্যে আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানিকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও মালিক পক্ষের মধ্যে একটি ভুল বোঝা-বুঝির সৃষ্টি করে ।
যার ফলে ওই গ্রুপ অব কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নাটেশ্বর আবুল খায়ের উচ্চ বিদ্যালয় । ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধান শিক্ষককে অপসারণ, ২০১২ সালে স্কুলের শিক্ষকরা বাদী হয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মামলাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় সুনামধন্য প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানির মর্যাদা ক্ষুন্ন হওয়ায় তারা বিদ্যালয়টির সবধরনের অর্থায়ন ও সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়।
স্থানীয়দের মতে, বিদ্যালয়টিতে পুনরায় শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে, শিক্ষার মানোন্নয়নে এবং ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে বিদ্যালয়টিকে তার চিরচেনা রূপে ফিরিয়ে আনতে আবারো আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানিকে দায়িত্ব নিতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আবুল খায়ের গ্রুপ যেভাবে দেশের সর্বত্র ও বিশেষ করে নাটেশ্বর অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসছে, সে জায়গা থেকে এ অঞ্চলের মানুষ তাদের নিকট দায়বদ্ধ ও কৃতজ্ঞ থাকবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অত্র বিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। স্থানীয়রা জানান, অতীতের সকল ভুল-ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রতিষ্ঠানের সুনামের স্বার্থে আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানিকে বিদ্যালয়টির হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে ও বিদ্যালয়টিকে আবারো তার চিরচেনা রূপে স্ব-গৌরবে গড়ে তুলতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রাক্তন গুণী শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় আবুল খায়ের গ্রুপ অব কোম্পানির কর্ণধারদের সু-দৃষ্টি কামনা করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বক্তারা। এ সময় উল্লেখযোগ্য যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন, এনসিটিবি’র উপসচিব ও অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আবু নাছের টুকু, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য ও প্রাক্তন ছাত্র ইঞ্জিনিয়ার মনির উল্যাহ, ঢাকা পিজি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রাক্তন ছাত্র ডা. আতা উল্যাহ বিপ্লব, এবি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ও প্রাক্তন ছাত্র সাইফুল ইসলাম আলম, ঢাকা চক-বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অত্র বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র জিয়া উদ্দিন উজ্জল, অস্ট্রেলিয়া চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক তাহেরুল হক মানিক, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার জামাল উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মোশাররফ হেসেন মিলন, প্রাক্তন ছাত্র সজীব আরাফাত ইয়ামিন ও তারেক আবির তন্ময়সহ স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

