ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় বিধ্বস্ত গাজা শহরে একটি আবাসিক ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে একই পরিবারের অন্তত ৩০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্সের বরাতে বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু।
সিভিল ডিফেন্সের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, মঙ্গলবার উদ্ধারকর্মীরা গাজা শহরের আল-রিমাল এলাকায় একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে এসব মরদেহ উদ্ধার করেন। নিহতরা সবাই সালেম নামের এক ফিলিস্তিনি পরিবারের সদস্য। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ওই এলাকায় চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় বাড়িটিতে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে।
উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো একে একে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। উদ্ধারকাজে অংশ নেওয়া কর্মীরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে— ওই পরিবারটির মোট সদস্যসংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ জন, যাদের সবাই ওই হামলায় নিহত হয়েছেন। এখনো অনেকের মরদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে পারে।
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলোর নিচে অসংখ্য মরদেহ আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সেই কারণে উদ্ধার অভিযান শুরু হলেও প্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি ও আধুনিক সরঞ্জামের মারাত্মক ঘাটতির কারণে কাজটি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। তবুও সীমিত সামর্থ্য নিয়েই অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
এদিকে, গাজাজুড়ে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজার হাজার মানুষ চাপা পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলমান সংঘাতে উদ্ধারকারীরা একের পর এক গণকবর ও সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন পরিবারগুলোর সন্ধান পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় শুরু হওয়া ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ৭০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। নিহতদের বড় একটি অংশ নারী ও শিশু। এ ছাড়া এক লাখ ৭১ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন এবং গাজার বিস্তীর্ণ অঞ্চল কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
এই যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও চাপ বাড়ছে। গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। পাশাপাশি গাজায় সংঘটিত সহিংসতা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও চলমান রয়েছে।

