সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর :
দিনাজপুরে চলতি মৌসুমে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের ব্যাপক উৎপাদন হলেও বাজারে এখনো এর পুরোপুরি প্রভাব পড়েনি। পেঁয়াজ গাছসহ মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বর্তমানে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাট-বাজারে কেজি প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এতে করে এ বছর এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষ করা কৃষকরা স্বল্প সময়ে ভালো লাভের মুখ দেখছেন। চাষিরা বলছেন, ভবিষ্যতেও তারা এই স্বল্পমেয়াদি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ উৎপাদনে আগ্রহী থাকবেন।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেলবাড়ীর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী মোবারক আলী জানান, ২৪ শতক জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে মোট খরচ পড়ছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু মাত্র ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যেই সেই জমি থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে অল্প সময়ে লাভের পাশাপাশি পরবর্তী ফসল চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করার সুযোগ পাচ্ছেন কৃষকরা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, স্বল্প সময়ে কম খরচে বেশি লাভের এই মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ দিনাজপুরের কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। কৃষি বিভাগের ধারাবাহিক সহযোগিতা ও কৃষকদের আগ্রহ অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে এই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলার চাষি রোকনুজ্জামান বলেন, আগে পেঁয়াজ চাষ করতে অনেক সময় লাগত। কিন্তু মুড়ি কাটা পেঁয়াজে কম সময়ে ভালো দাম পাচ্ছি। খরচ তুলনামূলক কম, ঝুঁকিও কম। এই পদ্ধতিতে চাষ করে আমি এখন সন্তুষ্ট।
নারী কৃষক নাজমা বেগম জানান, আমি প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলাম। কৃষি অফিসের লোকজন বুঝিয়ে বলার পর মুড়ি কাটা পেঁয়াজ লাগাই। এখন বাজারে ভালো দাম পাচ্ছি। সংসারের খরচ চালাতে এই আয় অনেক সাহায্য করছে।
কৃষক জাক্কির হোসেন বলেন, নভেম্বর-ডিসেম্বরে পেঁয়াজের দাম সব সময় বেশি থাকে। এই সময়ে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাজারে তুলতে পারায় আমরা লাভবান হচ্ছি। ভবিষ্যতে জমি আরও বাড়িয়ে এই পেঁয়াজ চাষ করব।
কৃষক মিজানুর রহমানের ভাষ্য মতে, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ করে দ্রুত টাকা হাতে আসছে। এতে করে পরের ফসলের জন্য সার, বীজ কিনতেও সুবিধা হচ্ছে। আগে এমন সুযোগ ছিল না।
কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ না পেলে হয়তো এই পদ্ধতিতে চাষ করা সম্ভব হতো না। সঠিক সময়ে সেচ, সার ও পরিচর্যার কারণে ফলন ভালো হয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, মুড়ি কাটা পেঁয়াজ একটি স্বল্পমেয়াদি ও লাভজনক প্রযুক্তি। আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি—কীভাবে গাছ কাটা হবে, কী পরিমাণ সার দিতে হবে এবং কীভাবে রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমছে এবং লাভ বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এই পদ্ধতিতে চাষ করলে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হয়, যা কৃষকের সার্বিক আয় বাড়াতে সহায়ক।
দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ মাসুম তুষার জানান, চলতি মৌসুমে সদর উপজেলায় প্রায় ২৫০ হেক্টর জমিতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। আমরা প্রায় ৩০ জন কৃষককে প্রণোদনার আওতায় এনে বীজ, সার ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সারাদেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেয়। সেই সময় বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে কৃষি বিভাগ পরিকল্পিতভাবে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এতে একদিকে কৃষক লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে ভোক্তারাও কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন। আগামী মৌসুমগুলোতে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের আবাদ আরও বাড়বে। এর ফলে দিনাজপুর অঞ্চল শুধু নিজ এলাকার চাহিদা নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এই সময়ে পেঁয়াজ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

