শীত মৌসুম এলেই অনেকের মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। মাথার এক পাশ বা দু’পাশ জুড়ে তীব্র যন্ত্রণা, আলো ও শব্দে অস্বস্তি, বমি ভাব—এসব উপসর্গ ভুক্তভোগীদের দৈনন্দিন জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। চিকিৎসকদের মতে, শীতকালে পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে মাইগ্রেনের প্রবণতা আরও তীব্র হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাপমাত্রা কমে গেলে মাথার ত্বক ও ঘাড়ের রক্তনালীগুলো দ্রুত সংকুচিত হয়। এর প্রভাব পড়ে ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুপথে, যা মাইগ্রেনের ব্যথা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। ফলে মাথায় তীব্র যন্ত্রণা অনুভূত হয়। যাদের আগে থেকেই মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, হঠাৎ ঠান্ডা বাতাস লাগলেও মাথাব্যথা শুরু হতে পারে।
এছাড়া শীতকালে গরম পরিবেশ থেকে হঠাৎ ঠান্ডা পরিবেশে যাতায়াত কিংবা ঠান্ডা থেকে গরমে প্রবেশ করলে ভাস্কুলার সিস্টেমের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। এতে মাথাব্যথা আরও বাড়তে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শীতের কারণে মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে, শারীরিক চলাচল কমে যায়—এই নিষ্ক্রিয়তাও মাইগ্রেনের যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়।
কীভাবে সতর্ক থাকবেন
চিকিৎসকদের মতে, মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
প্রথমত, শরীরকে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। শীতকালে তৃষ্ণা কম লাগলেও পানি পানের ব্যাপারে অবহেলা করা ঠিক নয়।
ঠান্ডা লাগলে সর্দি-কাশির পাশাপাশি মাইগ্রেনের সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। তাই শীতের সময় কান ও মাথা ভালোভাবে ঢেকে রাখা প্রয়োজন। মাইগ্রেনের রোগীদের প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস এড়িয়ে চলা উচিত। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোন বা স্ক্রিন ব্যবহারে বিরতি দেওয়া জরুরি।
খাদ্যাভ্যাসেও সচেতন থাকতে হবে। জাঙ্ক ফুড এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়াতে পারে। এসবের পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি ও মৌসুমি ফল রাখা ভালো। অ্যালকোহল এবং ধূমপান সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, বিশেষ করে সকালে হাঁটা বা স্ট্রেচিং, মাইগ্রেনের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। পাশাপাশি প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জেগে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।
চিকিৎসকরা আরও বলেন, বারবার মাইগ্রেন বা দীর্ঘস্থায়ী মাথাব্যথা হলে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা ও জীবনযাপনের সঠিক পরিবর্তন মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

