ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ মো. ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থার উন্নতির কোনো লক্ষণ দ্বিতীয় দিনেও পাওয়া যায়নি। বরং সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তার মস্তিষ্কের ফোলা (সেরিব্রাল ইডেমা) আগের তুলনায় আরও বেড়েছে। একইসঙ্গে তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে বলে জানিয়েছে চিকিৎসায় গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ড। চিকিৎসকদের মতে, এই দুটি উপসর্গ রোগীর অবস্থাকে আরও জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে এভারকেয়ার হাসপাতালের আইসিইউ ও এইচডিইউ কো-অর্ডিনেটর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবাল স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কের ফোলা আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে একটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ক্লিনিক্যাল অবস্থা হিসেবে বিবেচিত।
মেডিকেল বোর্ড জানায়, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সার্জিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে, অর্থাৎ ১৪ ডিসেম্বর পুনরায় শারীরিক অবস্থা মূল্যায়নের সময় মস্তিষ্কে অতিরিক্ত চাপ ও ফোলাজনিত ঝুঁকি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ব্রেন স্টেমে আঘাত এবং বাড়তি সেরিব্রাল ইডেমার কারণে রোগীর রক্তচাপে ওঠানামা হচ্ছে। পাশাপাশি আজ তার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি পাওয়া গেছে। তবে রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সাপোর্ট অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, ফুসফুসের কার্যকারিতা এবং ভেন্টিলেটর সাপোর্ট বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অবনতি হয়নি। চেস্ট ড্রেইন টিউব সচল রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
মেডিকেল বোর্ড আরও জানায়, ওসমান হাদির কিডনির কার্যক্ষমতা আপাতত বজায় আছে এবং ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে ব্রেন ইনজুরির কারণে শরীরের হরমোনজনিত ভারসাম্যহীনতা দেখা দেওয়ায় প্রতি ঘণ্টায় ইউরিন উৎপাদনে তারতম্য হচ্ছে। এ কারণে এসিড-বেস ব্যালেন্স, ফ্লুইড এবং ইলেক্ট্রোলাইট নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
রক্ত জমাট বাঁধা ও রক্তক্ষরণের ভারসাম্যহীনতা বর্তমানে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে ব্লাড সুগার সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে, যা এ ধরনের সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় একটি বড় ক্লিনিক্যাল চ্যালেঞ্জ।
মেডিকেল বোর্ড জানায়, ওসমান হাদির সার্বিক অবস্থা এখনো অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তবে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তাকে সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে বা সরকারের সিদ্ধান্তে তাকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলেও জানানো হয়।
একই সঙ্গে অপ্রয়োজনে হাসপাতালে ভিড় না করা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্যের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রাইমারি কনসালটেন্ট ডা. আলিউজ্জামান জোয়ার্দার, আইসিইউ কনসালটেন্ট ডা. মো. জাফর ইকবালসহ নিউরোসার্জারি, নিউরোমেডিসিন, অ্যানেস্থেসিয়া, কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি, বক্ষব্যাধি সার্জারি, অর্থোপেডিক্স, নাক-কান-গলা ও হেমাটোলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টরা। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিএমএস ডা. আরিফ মাহমুদ।

