সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে। গত তিন বছরে (২০২৩-২০২৫) দুই সিটি করপোরেশনে মোট ৪৭,৫৭৪টি বিবাহ বিচ্ছেদ নথিভুক্ত হয়েছে। এই প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতি বছরই বিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে, এবং ঢাকা উত্তরে বিচ্ছেদের হার দক্ষিণের চেয়ে বেশি।
মূল পরিসংখ্যান (২০২৩-২০২৫)সিটি কর্পোরেশন২০২৩২০২৪২০২৫ (ডিসেম্বর ৭/নভেম্বর পর্যন্ত)মোট (৩ বছরে)ঢাকা উত্তর৭,৫৯৯ টি৮,১৬৯ টি৮,৪০৭ টি২৪,১৭৫ টিঢাকা দক্ষিণ৭,৫৩০ টি৭,৬৯৫ টি৮,১৭৪ টি২৩,৩৯৯ টিমোট বিচ্ছেদ১৫,১২৯ টি১৫,৮৬৪ টি১৬,৫৮১ টি৪৭,৫৭৪ টি।
ঢাকা দক্ষিণে নারীরা পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি বিচ্ছেদের আবেদন করেছেন। ২০২৫ সালে স্ত্রীদের আবেদনের সংখ্যা ছিল ৫,৮৪৭টি, যেখানে স্বামীদের আবেদন ছিল ২,৩২৭টি।কম বয়সী দম্পতিরাই প্রধান শিকার: যারা নতুন বিয়ে করছেন এবং যাদের বিয়ের বয়স এক বছর থেকে পাঁচ বছরের কম, তারাই সবচেয়ে বেশি বিচ্ছেদের আবেদন করছেন।
বিবাহ বিচ্ছেদের প্রধান কারণসমূহসিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞদের আলোচনা থেকে বিচ্ছেদের বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে:শ্বশুর-শাশুড়ির নেতিবাচক আচরণ: দুই পরিবারের পক্ষ থেকে নেতিবাচক হস্তক্ষেপ সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করছে।বোঝাপড়ার অভাব ও পারিবারিক কলহ: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সহনশীলতা ও ধৈর্য কমে যাওয়া এবং বনিবনা না হওয়া।
সংসার করার প্রস্তুতির অভাব: বিয়ের আগে পারিবারিক প্রশিক্ষণ বা প্রস্তুতি না থাকা।নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়া ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি: নারীরা এখন আর আগের মতো অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে চান না এবং স্বাধীনভাবে জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার ও পরকীয়া: আধুনিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং পরকীয়ার সম্পর্ক বিচ্ছেদে প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে।দেনমোহর আদায়ের উদ্দেশ্য: কিছু ক্ষেত্রে নারীরা মোটা অঙ্কের দেনমোহর আদায়ের উদ্দেশে বিচ্ছেদের আবেদন করছেন।
বিচ্ছেদ ঠেকানোর সুযোগ, কিন্তু কাজে আসে নাবিচ্ছেদের আবেদন করার পর তিন মাসের মধ্যে সালিশের মাধ্যমে তা ঠেকানোর সুযোগ থাকলেও, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রীর কোনো পক্ষই সালিশি বৈঠকে আসেন না। ফলে শুনানি কার্যক্রমে খুব কম সংখ্যক দম্পতিই আবার সংসারে ফিরে যান, যা মোট সংখ্যার ১ শতাংশেরও কম। এর ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিচ্ছেদ কার্যকর হয়ে যাচ্ছে।

