রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে সিসিইউতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড জানিয়েছে, বিদেশে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পর্যায়ের শারীরিক উন্নতি এখনো হয়নি। ফলে আপাতত তাকে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমান অবস্থায় দীর্ঘ বিমানভ্রমণ খালেদা জিয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে মেডিক্যাল বোর্ড। প্রতিদিন অ্যাডভান্স চিকিৎসা দেওয়া হলেও একটি জটিলতা কমলে নতুন করে আরেকটি সমস্যা দেখা দিচ্ছে। লিভারের জটিলতা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও কিডনি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে চিকিৎসকদের। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ঝুঁকিপূর্ণ সীমা অতিক্রম করায় নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। বয়সজনিত কারণেও তার উন্নতি হচ্ছে ধীরগতিতে।
সোমবার সন্ধ্যায় মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার কিছু উন্নতি হলেও তা যথেষ্ট নয়। মাল্টিপল ডিজিস (বহুমুখী জটিলতা) থাকার কারণে একটি সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এলে অন্য সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। সিসিইউতে প্রতিদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। রিপোর্ট দেখে কিছু ওষুধ বন্ধ বা নতুন করে শুরু করা হচ্ছে, আবার কোথাও মাত্রা কমানো-বাড়ানো হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসায় বিদেশ ও দেশের মিলিয়ে দুই ডজনের বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসার অগ্রগতি পর্যালোচনা করছে। দেশে ফেরার পর বোর্ডে সরাসরি যুক্ত হয়েছেন তার পুত্রবধূ চিকিৎসক ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি নিয়মিত শাশুড়ির শয্যাপাশে থেকে চিকিৎসার বিষয়গুলো সমন্বয় করছেন।
৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ২৭ নভেম্বর স্থানান্তর করা হয় সিসিইউতে।
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডনে নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে না। অপারেটরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আগের অনুমোদন প্রত্যাহার করেছে বলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
ফ্লাইট সেফটি অ্যান্ড রেগুলেশন (এফএসআর) বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এফএআই এভিয়েশন গ্রুপের স্থানীয় এজেন্ট পূর্বনির্ধারিত স্লট বাতিলের আবেদন করেছে। আবেদনটি ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার জানানো হয়েছিল, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় এসে রাতে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লন্ডনের উদ্দেশে রওনা দেবে। তবে শিডিউল বাতিল হওয়ায় তার বিদেশযাত্রা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চিকিৎসা বোর্ডের মতে, শারীরিক অবস্থার কাঙ্ক্ষিত উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বিদেশ নেওয়া সম্ভব নয়।

