জামায়াত-বিএনপির গোপন সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসায় কূটনৈতিক পাড়ায় তোলপাড়
বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক আবার নতুনভাবে প্রকাশ্য হয়েছে। বিশেষ করে মহাসমাবেশ নিয়ে বিএনপি এবং জামায়াতের অভিন্ন অবস্থান কূটনৈতিক মহলকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
২০১৮’র নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ২০ টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। এ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির ওপর প্রচন্ড নাখোশ হয়েছিল। তারা বিএনপিকে বলেছিল যে, স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদী এবং উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে তাদেরকে সমর্থন করা সম্ভব হবে না।
মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর অনাগ্রহের কারণে এবং তাদের পরামর্শেই বিএনপি আস্তে আস্তে জামায়াতের থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখতে শুরু করে। আস্তে আস্তে বিএনপি জামায়াত নির্ভরতা কমিয়ে দেয়।
২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু জামায়াত তার নিজস্ব উদ্যোগে কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে জামায়াতের পক্ষ থেকেও বলা হয় যে, তারা বিএনপির সঙ্গে আর নেই।
২০০৮ পর থেকেই বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোটের মৃত্যু হয়েছে বলে জামায়াতের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো ভিন্ন। জামায়াত এবং বিএনপির একটি যে গোপন সম্পর্ক ছিল এবং আছে তা ক্রমশ প্রকাশ হতে শুরু করেছে।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত রাজনীতিতে প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু করেছে।গতকাল সন্ধ্যায় জামায়াত বিএনপির সঙ্গে সমান্তরালভাবে তারা কর্মসূচি দিয়েছে। এই কর্মসূচি দেওয়াটাকে অনেকেই উদ্বেগজনক বলছে এবং তারা মনে করছে যে এর ফলে বাংলাদেশে আবার সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ নতুন করে গজিয়ে উঠতে পারে।
আর এটি পশ্চিমা কূটনৈতিকদের জন্য নতুন করে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এমন একটি সময় বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে যখন মধ্য প্রাচ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। হামাসের উত্থানের পর বিভিন্ন দেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জামায়াত নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক ছাত্র শিবির বহু আগে থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাতায় জঙ্গি এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃত। এ কারণে জামায়াতকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করে না। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কিছু কিছু সহানুভূতি দেখা গেছে।
তাদের বিভিন্ন প্রতিবেদনে জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে কিছু মন্তব্য দৃষ্টি কটু ভাবে চোখে পড়েছে। অবশ্য এই অবস্থান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা হলেও সরে আসবে মধ্য প্রাচ্যের সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে এমনটি মনে করছেন কূটনৈতিকরা।
তবে কূটনীতিকরা কোনোভাবেই চায় না যে জামায়াত এবং বিএনপি একসাথে কাজ করুক। কারণ জামায়াতের ব্যাপারে ভারতের প্রচন্ড নেতিবাচক একটি অবস্থান রয়েছে। ভারত মনে করে যে জামায়াত কখনোই বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনার পক্ষে নয়। জামায়াত জঙ্গিবাদকে লালন করে, উৎসাহিত করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত সব সময় বলেছে যে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক আছে এবং বিএনপিকে সমর্থন করা হলে বা বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদের উত্থান ঘটবে।
ভারতের বক্তব্যটি যে সঠিক তা এখন আস্তে আস্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুভব করতে শুরু করেছে। আর এ কারণেই এই সময়ে জামায়াত এবং বিএনপির সমান্তরাল কর্মসূচি কূটনৈতিকদেরকে ভাবিত করেছে। তারা মনে করছে যে বিএনপি মুখে এক ধরনের কথা বলছে কিন্তু বাস্তবে তারা এখনো জামায়াতের সাথে গাঁট ছাড়া ছিঁড়তে পারেনি।
আর এ কারণেই সামনের আন্দোলন গুলোর ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো নতুন করে চিন্তা ভাবনা করবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।