দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন বন্ধ করে দ্রুত কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চলমান তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম যথানিয়মে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নির্দেশনা অমান্য করে কেউ কর্মবিরতিতে যুক্ত থাকলে সেটিকে শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, আচরণ বিধিমালা ও বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠন গত ১ ডিসেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন শুরু করে এবং পরবর্তীতে ৩ ডিসেম্বর থেকে তথাকথিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে এসেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এবং বর্তমান অবস্থান পরিষ্কার করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
সরকার জানিয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি শেষ হলে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা সমাধান এবং প্রধান শিক্ষক পদে সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির দাবির বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পত্র পাঠানো হয়েছে। দাবিগুলোর বাস্তবায়ন নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা এবং বেতন কমিশনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জানানো হয়।
তবে মন্ত্রণালয় অভিযোগ করেছে, নেওয়া উদ্যোগের পরও কিছু সংগঠন চলমান বার্ষিক পরীক্ষা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছে। কোথাও কোথাও পরীক্ষা নিতে ইচ্ছুক শিক্ষকদের ওপর হামলা ও লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটেছে। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ কারণে দেশের সব সহকারী শিক্ষকদের অবিলম্বে কর্মস্থলে ফিরে এসে তৃতীয় প্রান্তিক পরীক্ষাসহ যাবতীয় কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বেতন বৃদ্ধিসহ তিন দফা দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের একাংশ এখনও কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবার থেকে তারা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কার্যক্রম শুরু করেন। এ কারণে টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশের কিছু বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। যদিও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক বিদ্যালয়েই নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং কোথাও কোথাও প্রধান শিক্ষকদের উদ্যোগে পরীক্ষার কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৯টি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। শিক্ষক রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন লাখ। সহকারী শিক্ষকের অনুমোদিত পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি, বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন গত ২৭ নভেম্বর থেকে তিন দফা দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করে। গত সোমবার তারা বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয় এবং বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছে।

