স্টাফ রিপোর্টার
দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বেশিরভাগ খাল-বিল, নদী-নালা ও শত শত একর ফসলী জমির মাটি খেয়ে চলেছে প্রভাবশালীরা। সেই মাটিখেকোরা এখন ব্যাপক আকারে হানা দিয়েছে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড় ও ফসলি জমিতে। তারা ভেকু দিয়ে উর্বর ফসলি জমির ওপরের এক-দেড় হাত (টপ সয়েল) মাটি তুলে নিয়ে বিক্রি করছে ইটভাটায় ও বিভিন্ন স্থানে।
কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এই মাটিখেকোদের। এতে একদিকে জমির উর্বরতা হারিয়ে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে ফরিদপুরের মানচিত্র।
সম্প্রতি সদরপুরের কয়েকটি ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, শত শত বিঘা ফসলি জমিতে খনন করা হয়েছে পুকুর। নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নাদী ভাঙ্গনের হুমকিতে ফেলা হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির এসব মাটি কেটে ট্রলি গাড়ি ও ড্রাম ট্রাকের সাহায্যে বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।
মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে সড়কগুলোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শত শত অনুমোদন বিহীন অবৈধ ট্রলি ও ড্রাম ট্রাক। এসব গাড়ির অবাধ চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ট্রলি ও ট্রাকে বহন করা মাটি সড়কের ওপরে পড়ে থাকছে। বৃষ্টি হলেই সড়ক ভিজে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আবার অনেক সড়কের পিচও উঠে যাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ফসলি জমি ধ্বংসের জন্য শুধু মাটি ব্যবসায়ীরাই দায়ী নয়, জমির মালিকরাও দায়ী। কারণ মাটিখেকোদের নগদ টাকার লোভে পরেন তারা। এই সুযোগে নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনে নেয় মাটি ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে একটি চক্র এসব মাটিখেকোদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে মাটি বাণিজ্য করার সুযোগ করে দিচ্ছে। অনেক মাটি ব্যবসায়ীরা পুকুর খননের কথা বলে এবং কবরস্থান, মাদ্রাসা ও ঈদগাঁ মাঠ ভরাট করার কথা বলে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে গোপনে মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন জায়গায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার চরনাসিরপুর ইউনিয়নের হাকি মাতুব্বরের কান্দিতে আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে ২টি পয়েন্টে, ঢেউখালী ইউনিয়নের চন্দ্রপাড়া হানিফ হাজির ডাঙ্গি পুরাতন লঞ্চ ঘাটের আড়িয়াল খাঁ নদীর পাড়ে ৩টি পয়েন্টে, পিঁয়াজখালী এলাকার শয়তানখালী পদ্মা নদীর পাড়ে ৩টি পয়েন্টে, সদর ইউনিয়নের চরব্রাহ্মন্দী এলাকায় ২টি পয়েন্টে, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে, আকোটেরচর ইউনিয়নের কলা বাগানের পাশে পদ্মা নদীর পাড়ে ২টি পয়েন্টসহ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্ট চলছে অবৈধ ভেকু ও ড্রেজার।
সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিয়া সুলতানা বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বছরজুড়েই অবৈধ মাটি ও বালু কাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তার পরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি চক্র মাটি কেটে বিক্রি করছে। দিনে অভিযান চালালে রাতে মাটি কাটছে। এ বিষয়ে ফসলি জমি রক্ষায় জমির মালিকদেরও সচেতন হতে হবে।
তানভীর তুহিন
স্টাফ রিপোর্টার