সত্যজিৎ দাস (মৌলভীবাজার প্রতিনিধি):
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি বরাদ্দ ও অবকাঠামোগত সহায়তার ঘাটতি স্পষ্ট। নতুন ভবন,অ্যাম্বুলেন্স বা বাড়তি সরঞ্জামের কোনো ঘোষণাই নেই,এমনকি কেন্দ্রীয়ভাবে বরাদ্দ পাওয়া সরঞ্জামের সংখ্যাও নগণ্য। অন্যদিকে বেসরকারি বা বিদেশি অনুদানও নেই বললেই চলে।
এসব সংকটের মাঝেও হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা থেমে নেই-বরং স্বল্প জনবল নিয়েই ধারাবাহিক সাফল্য প্রদর্শন করছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মূল নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন,যিনি সীমিত সম্পদে হাসপাতালের কার্যক্রম সচল রাখছেন অবিরাম প্রচেষ্টায়।
বহু বছর ধরে শূন্য পড়ে থাকা পদগুলো পূরণ না হওয়ায় ৫০ শয্যার হাসপাতালটি চলছে মাত্র চারজন চিকিৎসকের ওপর ভর করে- দুইজন চিকিৎসক,একজন মেডিকেল অফিসার ও একজন ডেন্টাল সার্জন।
১২টি কনসালটেন্ট পদের ৮টিই এখনো শূন্য। ফলে মেডিসিন,চক্ষু, নাক-কান-গলা,কার্ডিওলজি, চর্মরোগসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবায় বিশেষজ্ঞ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
সরকারি সহায়তার ঘাটতি থাকলেও ডেলিভারি কেয়ারে শ্রীমঙ্গল হাসপাতাল দেখিয়েছে অভূতপূর্ব অগ্রগতি।
টানা পাঁচ মাস ধরে মাসে ২২৮ নরমাল ডেলিভারি,৬ টি সিজারিয়ান-যা এ হাসপাতালের ইতিহাসে প্রথম।নবজাতক ও মায়েরা সবাই সুস্থ আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সিনথিয়া তাসমিন বলেন, সরকারি সহায়তার সুযোগ খুব সীমিত। তবুও আমাদের টিমের আন্তরিকতা আর জনগণের আস্থা- এই দুটি জিনিসই আমাদেরকে এই সাফল্যে পৌঁছে দিয়েছে।
হাসপাতালের দৈনন্দিন কার্যক্রম এখনো বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে:ব্যাকআপ বিদ্যুৎ না থাকায় OT নিয়মিত বাধাগ্রস্ত,পুরাতন পাইপলাইন ও নষ্ট টয়লেট,জঙ্গলাকীর্ণ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ,বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতা,পর্যাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকলেও কাজের মান সন্তোষজনক নয়। এদিকেনঅ্যাম্বুলেন্স চালক বদলি হলেও তেলসঙ্কট ও অপারেশনাল জটিলতায় পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
ডা. তাসমিন আরও বলেন,“স্বল্প সম্পদেই আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা,খাবারের মান ও সেবার গুণগত মান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। দালাল দেখলে প্রমাণসহ জানান-এই হাসপাতালকে আমরা ‘আইডল হাসপাতাল’ করতে চাই। গর্ভবতী মায়েদের ঘরে নয়,হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি করার আহ্বান জানাই। এতে মা ও শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম থাকে”।
হাসপাতাল কর্তপক্ষ সূত্রে জানা যায়,টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনে ৯৮% শিশু টিকার আওতায় এনসিডি কর্নারে উচ্চ রক্তচাপ রোগী ৪১০৬ জন, ডায়াবেটিস ২৭৪৮ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন আশা দিয়েছেন,ডিসেম্বরের মধ্যেই কয়েকজন নতুন চিকিৎসক যোগ দিতে পারেন। তবে শ্রীমঙ্গলের মতো ব্যস্ত উপজেলা হাসপাতালে টেকসই সেবা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত ডাক্তার,সরঞ্জাম ও স্থায়ী বাজেট বরাদ্দই এখন সবচেয়ে জরুরি।
সরকারি সহায়তা ও অবকাঠামোগত বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোঠায়-তবু ডা. সিনথিয়া তাসমিন ও তাঁর টিমের নিবেদিত প্রচেষ্টা শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে সংকটের মধ্যেও একটি কার্যকর ‘সেবা মডেল’-এ পরিণত করেছে। সঠিক বরাদ্দ ও পরিকল্পনা পেলে এই হাসপাতাল সহজেই দেশসেরা উপজেলা কমপ্লেক্স হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

