সৈয়দ আমিরুজ্জামান
খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরত ই খুদা’র ১২৫তম জন্মবার্ষিকী আজ।
শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য সরকার তাকে ১৯৭৬ সালে একুশে পদক এবং ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে।
ড. কুদরত ই খুদা ১৯০০ সালের পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের মাড়গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পীর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিদ। মাতা সৈয়দা ফাসিহা খাতুন। তাদের সাত সন্তানের মধ্যে ড. কুদরত ই খুদা ছিলেন দ্বিতীয়। কুদরত ই খুদার নাম রেখেছিলেন কুদরতের পিতার পীর কলকাতার তালতলার হযরত সায়ীদ শাহ মুর্শিদ আল কাদেরী। খোন্দকার আবদুল মুকিত তৎকালীন সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেছিলেন। তিনি সেসময় হাতে গোনা কয়েকজন মুসলিমের মধ্যে ছিলেন, যারা ইংরেজি ভাষা জানত।
শিক্ষা
তার পিতা খোন্দকার আব্দুল মুকিত পীর বংশের সন্তান এবং নিজেও পীর হওয়ায় কুদরত ই খুদাকে মাদ্রাসায় পীর বানানোর নিমিত্তে ভর্তি করিয়ে দেন।
একদিন খুদার এক মামা তাদের বাড়িতে আসেন। তিনি তখন কলকাতায় পড়াশোনা করছেন। তিনি খুদাকে বাংলা বর্ণমালার বই দেন। বিকাল বেলা খুদাকে খেলতে দেখে, তার মামা, সেই বইটি সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করায় বালক খুদা সব মুখস্থ উত্তর দেন। তিনি বালক খুদার প্রতিভা দেখে তাকে মাদ্রাসা থেকে ছাড়িয়ে এনে মাড়গ্রাম এম.ই. স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে তিনি চলে আসেন কলিকাতা উডবার্ন এম.ই. স্কুলে এবং কলকাতা মাদ্রাসায়। কলকাতা মাদ্রাসা থেকে তিনি ১৯১৮ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে। প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রিয় ছাত্র ছিলেন তিনি। সেখান থেকেই তিনি ১৯২৫ সালে রসায়নে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে এম.এস.সি পাশ করেন। পাশ করার পর তিনি সরকারী বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান ডক্টরেট করার জন্য। সেখানে তিনি স্যার জে. এফ থর্পের অধীনে থিসিস করেন। প্রফেসর থর্প কুদরত ই খুদাকে স্বাধীনভাবে গবেষণা করতে দেন। ফলে তিনি চারবছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ কাজ করেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় হতে Stainless Configuration of Multiplanmet Ring বিষয়ে গবেষণার জন্য তিনি ১৯২৯ সালে রসায়নে ডি.এসসি. ডিগ্রি লাভ করেন।
পেশা
ডক্টর অব সায়েন্স (ডি.এসসি. ডিগ্রী) লাভ করার পর দেশে ফিরে এসে প্রাথমিকভাবে তার কোনো চাকরি জুটে নি। আড়াই বছর বেকার ছিলেন তিনি। সেসময় প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি নিয়ে গবেষণা থিসিস লিখেন তিনি।
কুদরত ই খুদা ১৯৩১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৩৬ সালে তিনি এ কলেজে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক তাকে ইসলামিয়া কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং ১৯৪৬ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ড. কুদরত ই খুদা পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন এবং জনশিক্ষা পরিচালকের দায়িত্ব নেন (১৯৪৭-১৯৪৯)। অতঃপর তিনি পাকিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ক উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োজিত হন (১৯৫০-১৯৫৩)। ১৯৫৩-১৯৫৪ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারসমূহের পরিচালক ছিলেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে তিনি চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে গড়ে তুলেন বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগার। দেশীয় শিল্পের বিকাশ হয় তার হাত দিয়ে। ১৯৬৩ সালে চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পরে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের জন্য যে শিক্ষাকমিশন গঠন করা হয় কুদরত ই খুদা তার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট প্রণীত হয়।
গবেষণা
পাটকাঠি থেকে মণ্ড তৈরী করে সেই মণ্ড থেকে অতি উন্নতমানের দৃঢ় তক্তা করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। পারটেক্স কাঠ কুদরত ই খুদার বিশেষ অবদান। সমুদ্রের পানি থেকে লবণ চাষিরা যে পদ্ধতিতে লবণ সংগ্রহ করেন তা থেকে শুধুমাত্র খাবার লবণ (NaCl) সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু সমুদ্রের পানিতে NaCl ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ও ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড ও স্বল্পমাত্রায় ব্রোমিন থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এসব রাসায়নিক প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয় এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে এসব বাংলাদেশে আমদানী করা হত। কুদরত ই খুদাই প্রথম হিসাব করে দেখান, বড় কোনো কারখানায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লবণ আহরণ করা হলে, সে কারখানা যদি ১ লাখ টন লবণ উৎপাদন করে, তবে সেখানে তার পাশাপাশি বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে ১০ হাজার টন ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, ১০ হাজার টন ম্যাগনেশিয়াম সালফেট ও সেই অনুপাতে পটাশিয়াম ক্লোরাইড উৎপন্ন হবে।
কুদরত ই খুদা স্টেরিও রসায়ন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে তার গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল বনৌষধি, গাছগাছড়ার গুণাগুণ, পাট, লবণ, কাঠকয়লা, মৃত্তিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ। বিজ্ঞানী হিসাবে তার ও তার সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি পাটসংক্রান্ত। এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য।
গবেষণা তালিকা
একক বা যৌথভাবে
Bitter constituents from Caesalpinia bonducella Flem. (সিজালপিনিয়া বনদুচাইল্লা ফ্লেম. [স্থানীয় নাম ‘নাটালকাঁটা’ বা ‘মালাক্কা নাটা’ থেকে নিষ্কাশিত তিতা উপাদানসমূহ)। কেমিস্ট্রি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (সংখ্যা ১৭), ১৯৬০।
Strainless Monocyclic Rings (পীড়নবিহীন একচাক্রিক বলয়নিচয়)। নেচার, ১৯৩৩।
Preparation of cis-o-carboxycyclohexaneacetic acid (সিস-ও-কার্বক্সিসাইক্লোহেক্সে নঅ্যাসিটিক অ্যাসিড প্রস্তুতি)। জার্নাল অফ দ্য কেমিক্যাল সোসাইটি, ১৯২৬।
Studies in keto-lactol tautomerism. Part I. Ring-chain tautomerism in α-carboxy-γ-acetyl-ββ- dimethylbutyric acid and a synthesis of γ-acetyl-ββ-dimethylbutyric acid (কিটো-ল্যাকটল টটোমারিতার ওপর আলোকপাত। প্রথম ভাগ: আলফা-কার্বক্সি-গামা-অ্যাসিটা ইল-বিটা বিটা-ডাইমিথাইল বিউটাইরিক অ্যাসিডে বলয়-শৃঙ্খল টটোমারিতা এবং গামা-অ্যাসিটাইল-বিটা বিটা-ডাইমিথাইলবিউটাইরিক অ্যাসিডের একটি সংশ্লেষণ)। জার্নাল অফ দ্য কেমিক্যাল সোসাইটি, ১৯২৯।
Studies in keto-lactol tautomerism. Part V. The influence of methylcyclohexane rings on the tautomerism of δ-ketonic acids (কিটো-ল্যাকটল টটোমারিতার ওপর আলোকপাত। পঞ্চম ভাগ: সিগমা-কিটোনিক অ্যাসিডের টটোমারিতার ওপর মিথাইলসাইক্লোহেক্সেন বলয়নিচয়ের প্রভাব)। জার্নাল অফ দ্য কেমিক্যাল সোসাইটি, ১৯৩৬।
Multiplanar Cyclohexane Rings (বহুতলীয় সাইক্লোহেক্সেন বলয়নিচয়)। নেচার, ১৯৩৫।
Fish and fish products. 4. Evaluation of certain important types of fish for their valuable constituents and essential amino acids (মাছ ও মাছজাত পণ্য। উপাদেয় উপাদান ও অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিডের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাছের মূল্যায়ন)। সায়েন্স রিসার্চ, ১৯৬৪।
Partition of protein and non-protein nitrogenous constituents in different parts of fish body (মাছদেহের নানান অংশে আমিষ ও বে-আমিষীয় নাইট্রোজেনজাত উপাদানের বিভাজন)। সায়েন্স রিসার্চ, ১৯৬৪।
Some valuable constituents of oil cakes from East Pakistan (পূর্ব পাকিস্তানের তেলের কেকে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ উপাদান)। পাকিস্তান জর্নাল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, ১৯৫৯।
Nutritional investigations on fats and oils. 1. Growth of young albino rats as influenced by heat-treated mustard oil and erucin supplementation of groundnut oil in fish flour diet (চর্বি ও তেলে পুষ্টি গুণাগুণ পরীক্ষা। ১. উত্তপ্ত সরিষার তেল এবং মাছ-ময়দা খাবারে উপস্থিত চীনাবাদাম তেলে ইরুচিন সম্পূরকের ছোটো ধবল ইঁদুরের বৃদ্ধির ওপর প্রভাব বিশ্লেষণ)। পাকিস্তান জর্নাল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, ১৯৬৬।
Chemical investigations of Cephalandra indica I. Constituents of dry aerial parts (সিফালান্দ্রা ইন্দিকা (তেলাকুচার) রাসায়নিক অনুসন্ধান। ১. শুষ্ক বায়ব অঙ্গের উপাদানরাজি)। পাকিস্তান জর্নাল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, ১৯৬৫।
শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট
প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের উপযোগী সমাজগঠনমূলক একটি সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার রুপরেখা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই গঠিত ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ প্রণীত সুপারিশমালা। এই কমিশনের সভাপতি ছিলেন কুদরাত-এ-খুদা। তার নাম অনুসারে পরবর্তীকালে রিপোর্টটির নাম রাখা হয় ‘ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষাকমিশন রিপোর্ট’। এটি প্রকাশিত হয় ১৯৭৪ সালের মে মাসে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট’ নামে। এতে পরিশিষ্ট বাদে ৩৬টি অধ্যায় ছিল এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল মোট ৪৩০।
নতুন সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার চার মূলনীতি-ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করে কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টটি তৈরি হয়েছিল।
স্বীকার করতেই হবে, সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের মানসে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। এ লক্ষ্যে তিনি অনেক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১৯৭৪ সালে এক বক্তৃতায় নিজের নেয়া পদক্ষেপগুলোর উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু এক বক্তৃতায় বলেন, ‘এই সমস্ত পদক্ষেপগুলো নেয়া হয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে সমাজতন্ত্র কায়েমের উদ্দেশ্যে।’ সমাজতন্ত্রের আগে ‘শান্তিপূর্ণ’ শব্দের ব্যবহার অতীব তাৎপর্যপূর্ণ। তাঁর শিক্ষানীতিতেও ‘শান্তিপূর্ণভাবে সমাজতন্ত্র’ -এর দিকে ধাবিত হওয়ার ব্যাপার ছিল।
বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্র বলতে বুঝতেন বৈষম্যমুক্তি, সব মানুষের সমান অধিকার, বিজ্ঞানভিত্তিক সর্বজনীন শিক্ষা, শিক্ষা শেষে কাজ পাওয়ার নিশ্চয়তা আর অসীম দেশপ্রেম। সমাজতন্ত্র বলতে বঙ্গবন্ধু যা বুঝতেন, তিনি তা তখন একটি মাত্র ধ্রুপদী বাক্যে প্রকাশ করেছেন- ‘বিশ্ব আজ দুইভাবে বিভক্ত- শোষক ও শোষিত, আমি শোষিতের পক্ষে।’ বিশাল এই নিপীড়িত জনগণের পক্ষ নিয়ে শোষণমুক্তিই ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের সব চিন্তা ও কর্মের মূলে। তাঁর শিক্ষাচিন্তাকে এ থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া যায় না।
কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব, মানবতা ও বিশ্বনাগরিকত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক রূপ-রূপান্তরের হাতিয়াররূপে শিক্ষা, প্রয়োগমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূলে শিক্ষা, কায়িক শ্রমের মর্যাদাদান, নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলি, সৃজনশীলতা ও গবেষণা এবং সামাজিক অগ্রগতি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক প্রগতি। এখানে ‘প্রয়োগ অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূলে শিক্ষা’ কথাটি সর্বাপেক্ষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। অর্থনীতির পরিবর্তনীয় যুগে, বাজার বা মুক্ত অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা ভিন্ন, যেখানে আজ অস্তিত্ব রক্ষা করা দায়, সেখানে ১৯৭২ সালের শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে ইতিবাচক অগ্রবর্তীতার ইঙ্গিত আছে তা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কায়িক শ্রমের মর্যাদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার যে গুরুত্ব সেদিন দেয়া হয়েছিল, তা অব্যাহত থাকলে আজ এই কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের যুগে আমরা নিশ্চিত আরো বেশি অর্থনৈতিক সাফল্য বহন করতে পারতাম এবং জাতি হিসেবেও অধিকতর স্বাবলম্বী হওয়া যেত।
শিক্ষা হচ্ছে সামাজিক রূপান্তরের একটি সুষম হাতিয়ার। শিক্ষা তখনই শক্তিতে পরিণত হয় যখন শিক্ষাকে সামষ্টিক প্রয়োজনে লাগানো হয়। এর সঠিক ব্যবহারে প্রথাগত কথিত আচার-শুদ্ধতা উবে যায় এবং পরিবর্তিত হয় সমাজের আন্তকাঠামো। কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল ‘সব নাগরিকের মেধা ও প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষা’ প্রদানের বিষয়টি। শিক্ষার্থীর মেধা ও প্রবণতা অনুসারে অর্থাৎ কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে যেমনটি বলা হয়েছিল, সেভাবে শুরুটা করা গেলে আধুনিক বিশ্বে নিশ্চয়ই এত দিনে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় ও প্রতিষ্ঠা সমুন্নত করা যেত। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। তাই আজও চলছে মেধার অপচয়। এই অপচয়ের অন্যতম কারণ দেশে আজও বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
মৃত্যু
কুদরত ই খুদা ১৯৭৭ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
রচনাবলী ও প্রকাশনা
বিজ্ঞানের সরস কাহিনী, বিজ্ঞানের বিচিত্র কাহিনী
বিজ্ঞানের সূচনা, জৈব-রসায়ন (৪ খন্ড), পূর্ব-পাকিস্তানের শিল্প সম্ভাবনা, পরমাণু পরিচিতি, বিজ্ঞানের পহেলা কথা, যুদ্ধোত্তর বাংলার কৃষি ও শিল্প,
বিচিত্র বিজ্ঞান, পবিত্র কোরআনের পূত কথা,
অঙ্গারী জওয়ারা।
সাময়িকী
পুরোগামী বিজ্ঞান (১৯৬৩), বিজ্ঞানের জয়যাত্রা (১৯৭২)।
সম্মাননা
একুশে পদক: ১৯৭৬, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে স্বাধীনতা
পুরস্কার: ১৯৮৪ (মরণোত্তর), তমঘা-ই-পাকিস্তান,
সিতারা-ই-ইমতিয়াজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী।
কাজ
তার গবেষণা পত্র ৬৩টি এবং পেটেন্ট ১৮টি।

সৈয়দ আমিরুজ্জামান
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট;
বিশেষ প্রতিনিধি, ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল পোস্ট ও সাপ্তাহিক নতুনকথা;
সম্পাদক, আরপি নিউজ;
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতি;
‘৯০-এর মহান গণঅভ্যুত্থানের সংগঠক ও সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী।
সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ খেতমজুর ইউনিয়ন।
সাধারণ সম্পাদক, মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় জাতীয় কমিটি।
প্রাক্তন সভাপতি, বাংলাদেশ আইন ছাত্র ফেডারেশন।
E-mail : syedzaman.62@gmail.com

