নির্বাচনকালিন সরকার নিয়ে দুই মেরুতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি, পশ্চিমাদের ভাবনা ভিন্ন
বিশেষ প্রতিবেদকঃ
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর তিন মাসের কিছু বেশি সময় রয়েছে। নির্বাচন কমিশন বলছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তারা নির্বাচন করতে চায়।
এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন জনগণের মধ্যে আস্থা অর্জনের জন্য প্রাণন্ত চেষ্টা করছে। বিভিন্ন অংশজনের সঙ্গে বৈঠক করছে। তবে নির্বাচন নিয়ে প্রধান যে প্রশ্ন তা হচ্ছে নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে?
বিএনপি বলছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে না।
ফলে নির্বাচনকালীন সরকার কি রকম হতে পারে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো দুই মেরুতে অবস্থান করছে। বিএনপি নির্বাচনকালীন কেমন সরকার চায়- বিএনপি নির্বাচনের সময় একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় এবং এই জন্য বিএনপির দুটি বিকল্প প্রস্তাবনা রয়েছেঃ
প্রথমত বিএনপি চাইছে সরকার জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধন করবে এবং সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে ২০১১-এর আগে যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল সেটি পুনঃপ্রবর্তন করবে।
যেহেতু আগামী অক্টোবরে সংসদের শেষ অধিবেশন বসবে সেহেতু সেই অধিবেশনেই বিএনপি চাইছে যে সংবিধান সংশোধন করতে। কিন্তু বিএনপির নেতারাও জানে যে, আওয়ামী লীগ এটি করবে না।
এর বিকল্প কি হতে পারে তা নিয়ে বিএনপির নেতারা বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলে আলাপ আলোচনা করেছেন। তারা বলছেন যে জরুরি প্রয়োজনে এবং রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে গিয়েও তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যায়। যেমনটি হয়েছিল ১৯৯১ সালে।
সেই সময় তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করা হয়েছিল যা ছিল সংবিধান বহির্ভূত। পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে এটিকে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। এখন বিএনপিও দ্বিতীয় বিকল্প হিসাবে এটি চাইছে।
তবে বিএনপি এখন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে চায় না। বরং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিতে চায়।
বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত কোন ব্যক্তির নাম ঘোষণা করা হয়নি। অপরদিকে, পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে যেহেতু আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির দেশের দুটি প্রধান বিরোধী দল। কাজেই দুই পক্ষের দাবিকে একটি সমঝোতার জায়গায় নিয়ে আসা উচিত।
তারা যেমন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকেও সমর্থন করে না আবার তেমনি ভাবে বর্তমান আদলে যে নির্বাচনকালীন সরকার সেটিকেও সমাধানের পথ বলে মনে করে না।
বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে দুই পক্ষকে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার জায়গায় আসতে হবে। সেই সমঝোতা কি রকম হতে পারে তা নিয়ে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো এবং সুশীল সমাজের সাথে আলাপ আলোচনা করছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে বহাল রেখে একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টা মন্ডলী গঠনের ভাবনা রয়েছে কোনো কোনো কূটনীতিকদের মধ্যে। তারা মনে করছে যে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন, কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার থাকবে না।
মন্ত্রিসভার অন্য কোনো সদস্য না রেখে ১০ সদস্যের একটি নিরপেক্ষ উপদেষ্টার মাধ্যমে সরকার পরিচালনা করা যায় কিনা এই ভাবনা রয়েছে কূটনীতিকদের কোন কোন অংশের।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন যে নির্বাচনকালীন সরকার জাতীয় সরকারের আদলে হওয়া উচিত। সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে যদি একটি নির্বাচনকালীন সরকার হয় তবে সেটির মাধ্যমে নির্বাচন বিষয়টি সমঝোতা হতে পারে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলেনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যেই বলেছেন যে, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে।
বিভিন্ন কূটনৈতিক আলোচনায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারের কাজের পরিধি হবে ছোট, রুটিন কাজের বাইরে তারা কোনো দায়িত্ব পালন করবে না।
নির্বাচনকালীন সরকারের কোনো প্রতিনিধি অর্থাৎ কোনো মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকা সহ অন্য কোনো এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রোটোকল পাবে না।
তবে এতগুলো ভাবনার মধ্যে শেষ পর্যন্ত কোন প্রস্তাবিত নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে সেটি এখন দেখার বিষয়।