৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ওয়াশিংটন/জাতিসংঘ সদর দফতর: গাজা পরিস্থিতি নিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে যে তারা গাজার ভবিষ্যৎ প্রশাসনের জন্য “সমস্ত বিকল্প বিবেচনা” করছে, যা ইসরায়েলের দখলদারিত্ব, বহুপাক্ষিক প্রশাসন, বা স্থানীয় শাসনের বিকল্পের মধ্যে হতে পারে। তবে জাতিসংঘ এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে যে, “গাজায় জাতিগত নির্মূলের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে,” যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান: গাজার ভবিষ্যৎ কেমন হবে?
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, “গাজার দখল বা প্রশাসনের বিষয়ে আমরা সব সম্ভাবনা পর্যালোচনা করছি। এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।” বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এতে ইসরায়েলপন্থী কোনো প্রশাসন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা থাকতে পারে, যা ফিলিস্তিনিদের স্বায়ত্তশাসনের পথকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে গাজার অবকাঠামো ধ্বংস করেছে এবং অঞ্চলটির উপর কঠোর অবরোধ অব্যাহত রেখেছে। সাম্প্রতিক হামলায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
জাতিসংঘের সতর্কবার্তা: ‘জাতিগত নির্মূল’ হতে পারে
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, “গাজায় চলমান সামরিক অভিযান এবং সম্ভাব্য দখল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করতে পারে। এটি কার্যত একটি জাতিগত নির্মূলের দিকে এগোচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।”
জাতিসংঘ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করছে যে, যদি ইসরায়েল গাজার ওপর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, তবে ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক ভূমি থেকে চিরতরে বিতাড়িত করার প্রচেষ্টা আরও বেগবান হতে পারে।
আরব বিশ্ব ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে আরব দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।
- তুরস্ক ও ইরান: ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে “যুদ্ধাপরাধ” আখ্যা দিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়কে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
- মিশর ও কাতার: কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়ে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিতে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
- ইউরোপীয় ইউনিয়ন: গাজায় মানবিক বিপর্যয় এড়াতে একটি টেকসই রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
গাজার বাসিন্দারা এখন চরম মানবিক সংকটের মুখোমুখি। হাজার হাজার পরিবার বাস্তুচ্যুত, খাদ্য ও পানি সংকট চরম আকার ধারণ করেছে, এবং চিকিৎসা সুবিধা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলছে, “গাজা আমাদের ভূমি। আমাদের ভবিষ্যৎ কোনো বাহ্যিক শক্তি ঠিক করতে পারে না। জাতিসংঘ এবং বিশ্ব শক্তিগুলোকে ইসরায়েলের দখলদার নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।”
পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের “সব বিকল্প খোলা রাখার” ঘোষণা ইঙ্গিত দেয় যে গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা নিয়ে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এটি কি ফিলিস্তিনিদের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করবে, নাকি দখলদারিত্ব আরও পাকাপোক্ত করবে—সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
🔴 গাজা সংকটের আরও আপডেট জানতে চোখ রাখুন Bangla.fm-এ!