৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, গাজা: কয়েক মাসের টানটান উত্তেজনার পর, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) ঘোষণা করেছে যে তারা গাজার কেন্দ্রস্থলে স্থাপিত বিভক্ত করিডোর থেকে তাদের সেনাদের প্রত্যাহার করেছে। এই করিডোরটি উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিচ্ছিন্ন করেছিল, যা সাম্প্রতিক সংঘাতের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অবস্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সেনা প্রত্যাহারের ফলে গাজার ভেতর চলাচলের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে, তবে এটি কি দীর্ঘমেয়াদী শান্তির ইঙ্গিত নাকি সামরিক কৌশল পরিবর্তনের অংশ, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা ভিন্নমত পোষণ করছেন।
সেনা প্রত্যাহারের কারণ ও প্রেক্ষাপট
গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে আসছিল। এই করিডোরটি স্থাপনের মূল লক্ষ্য ছিল গাজার ভেতরে হামাসের কার্যক্রম সীমিত করা, অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ করা এবং ইসরায়েলি বাহিনীর জন্য সামরিক সুবিধা তৈরি করা। তবে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক চাপ, যুদ্ধের উচ্চ ব্যয় এবং মানবিক সংকটের কারণে ইসরায়েল সামরিক কৌশল পরিবর্তন করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, “আমরা আমাদের কৌশলগত লক্ষ্য অনুযায়ী বাহিনীকে পুনর্বিন্যাস করছি। সেনা প্রত্যাহার মানে এই নয় যে অভিযান বন্ধ হয়েছে। বরং এটি একটি নতুন কৌশলের প্রস্তুতি।” অর্থাৎ, সেনারা হয়তো অন্য কোনো অবস্থানে মোতায়েন হচ্ছে বা নতুন সামরিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পিছু হটছে।
অন্যদিকে, হামাসের একটি মুখপাত্র দাবি করেছে, “এটি ইসরায়েলের পরাজয়। গাজার প্রতিরোধ শক্তি তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে।” তবে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) এই দাবিকে অস্বীকার করে বলেছে যে, তারা অভিযানের সফলতা অর্জনের পরই সেনাদের সরিয়ে নিচ্ছে।
মানবিক সংকট ও স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া
গাজা করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ফলে উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সাহায্য চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেনা প্রত্যাহারের ফলে মানবিক সহায়তার পথ কিছুটা উন্মুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা মাসের পর মাস আটকে ছিলাম। খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছিল, ওষুধ পাওয়া যাচ্ছিল না। সেনারা চলে যাওয়ার পর আমরা একটু হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।”
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা (OCHA) জানিয়েছে যে, ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের ফলে কিছু অংশে সহায়তা পাঠানো সহজ হতে পারে, তবে এখনও পুরো গাজা বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। বহু মানুষ আশ্রয়হীন, হাসপাতালগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মৌলিক পরিষেবার ঘাটতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক অবস্থান
এই প্রত্যাহারের খবর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচিত হয়েছে।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সামরিক কৌশলকে সমর্থন জানালেও, তারা সম্প্রতি গাজার মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র বলেন, “আমরা চাই, গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করুক এবং সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষা পায়।”
- জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বারবার গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে আসছে।
- আরব দেশগুলো, বিশেষত কাতার, মিশর এবং তুরস্ক, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে “অধিকৃত অঞ্চল থেকে সাময়িক পিছু হটা” বলে উল্লেখ করেছে এবং তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরও চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে।
পরবর্তী পরিস্থিতি: গাজায় কি শান্তি আসবে?
বিশ্লেষকদের মতে, এই সেনা প্রত্যাহার হয়তো সাময়িক কৌশলগত পরিবর্তনের অংশ এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল আবারও গাজায় সামরিক তৎপরতা বাড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞ ড. হুসাম আবু-মারিয়া আল জাজিরাকে বলেন, “ইসরায়েল কৌশল পরিবর্তন করেছে, কিন্তু তাদের মূল লক্ষ্য এখনও অপরিবর্তিত—গাজায় হামাসকে দুর্বল করা এবং নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা।”
অন্যদিকে, গাজার সাধারণ জনগণ শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ চাচ্ছে। তবে বাস্তবতা হলো, এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক সমাধান প্রয়োজন, যা এখনো দেখা যাচ্ছে না।
শেষ কথা
ইসরায়েলি বাহিনীর গাজার কেন্দ্রস্থল থেকে প্রত্যাহার একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলেও, এটি কি সত্যিকারের শান্তির পথ খুলে দেবে, নাকি সামরিক কৌশলের পরিবর্তন মাত্র—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। গাজার নিরীহ জনগণের জন্য এই সংঘাত কবে শেষ হবে, সে উত্তর এখনও অজানা।
🔴 গাজা পরিস্থিতির সবশেষ আপডেট পেতে চোখ রাখুন Bangla.fm-এ!
US will ‘look at all options’ for Gaza takeover as UN warns against ‘ethnic cleansing’