জিয়াউর রহমান জিয়া মহেশপুর (ঝিনাইদহ):
দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীমতম পৌরসভার একটি মহেশপুর পৌরসভা। ১৮৬৯ সালে গঠন করা হলে ২০০৪ সালে
প্রথম শ্রেণী হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন এ পৌরসভাটি। সম্ভাবনাময় এ পৌরসভায় ২০১৬ সালে মেয়রের চেয়ারে বসেন ততকালিন আওয়ামীলীগের সাংসদ শফিকুল আজম খান চঞ্চলের চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রশিদ খান। এরপর থেকে ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের কবলে পড়ে রূপ পাল্টাতে শুরু করেন দেশের প্রথম শ্রেনীর পৌরসভাটি। মেয়র আব্দুর রশিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও লাগামহীম অনিয়মে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে এ পৌরসভাটি। ৫ আগস্টের পর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও পৌরসভা জুড়ে রয়ে গেছে দুর্নীতির একাধিক ক্ষতচিহ্ন। বর্তমানে এ পৌরসভার ৪৯ জন কর্মচারীর মধ্যে ২৩ জন নিয়োগের পদ ব্যতিরেখে সুবিধামত অন্য পদে চাকুরী করছেন। পদ বদলে চাকুরী করা বেশিভাগ কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছেন মেয়র আব্দুর রশিদ খানের সময়ে। মূলত মেয়র ও প্রকৌশলীদের ঘুষ বানিজ্যের অপকৌশলে এমন ঘটনার স্বাক্ষী হতে হয়েছে মহেশপুর পৌরসভাকে।
জানা গেছে, প্রথমে মোটা অংঙ্কের ঘুষ বানিজ্যে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিতেন মেয়র আব্দুর রশিদ। পরবর্তীতে আবারও ঘুষ নিয়ে সুয়োগ বুঝে শূন্য পদের জায়গায় মাস্টার রোলে থাকা ওইসব ব্যক্তিদের চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হতো। নিয়োগ পত্রে যে পদ উল্লেখ থাকুক না কেন নিয়োগপ্রাপ্তরা আগের জায়গাতেই কাজ করতেন।
গত বছরের ৮ জুন মাস্টাররোলে চাকুরীর বয়সসীমা ২৮ দিন থাকা হামিদুর রহমানকে তড়িঘড়ি করে ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে ৬ বছর আগে থেকে বন্ধ থাকা পাম্প চালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। যদিও কখনো পাম্প চালাননি হামিদুর রহমান। তিনি এখন পর্যন্ত কর নির্ধারন সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। একই ভাবে পাম্প চালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় রাজিয়া সুলতানাকে। তিনিও পদ ব্যতি রেখে শুরু থেকেই টিকাদানের কাজ করে আসছেন। একই দিনে পাইপ লাইন মেকানিক হিসেবে নিয়োগ পান কামাল উদ্দিন ও জিয়ারুল ইসলাম। তারাও কখনো পাইপ লাইন মেকানিকের কাজ করেননি। কামাল উদ্দিন ৯নং ওয়ার্ডের কর আদায় ও জিয়ারুল ইসলাম বালিগর্ত বাজারের পাম্প চালকের কাজ করে আসছেন। গত বছরের এসব নিয়োগ কমিটিতে সদস্য ছিলেন বর্তমান প্রকৌশলী সোহেল রানা। তিনিও ঘুষের টাকায় সন্তুষ্ঠ হয়ে মেয়রের
দুর্নীতির তালে তাল মিলিয়েছেন। এছাড়াও বর্তমানে এ পৌরসভায় ৪৯ জন কর্মচারী বাদে আরো ১২জন কর্মচারী মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন। ঘুষ বানিজ্যের মাধ্যমে তাদেরকে মাস্টার রোলে নিয়োগ দিয়েছেন মেয়র আব্দুর রশিদ খান।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ পৌরসভায় পদ বদলে প্রশাসন বিভাগের নৈশ্য প্রহরী সুরুজ আলী জমিদারপাড়া পানির পাম্প চালান ও মালি শ্রী মদন কুমার দত্ত অফিস সহায়কের কাজ করেন। হিসাব বিভাগের সুজন আলী পদে এমএলএসএস হলেও তিনি ৮ নং ওয়ার্ডের কর আদায়ের কাজে নিয়োজিত আছেন।
কর বিভাগের সহকারী আজিমুল ইসলাম শাহীন কর নির্ধানের কাজ করেন। কর আদায় সহকারী শাহাজামাল করেন
ডিজিটাল শাখার জন্ম/মৃত্যু নিবন্ধন নাগরিক, বিভিন্ন ভাতা প্রদানের কাজ ও ইমরান হোসেন হিসাব
সহকারীর কাজে নিয়োজিত আছেন। বাজারের খাজনা আদায়কারী শাহজাহান কবীর ও তসলিম হুসাইন ৬ ও ৭
নং ওয়ার্ডের কর আদায় করেন।
প্রকৌশল বিভাগের রোড রোলার চালক আক্তারুজ্জামানকে দিয়ে করানো হয় ডিজিটাল শাখা, ট্রেডলাইসেন্স ও বিল প্রস্তুতের কাজ ও ট্রাক হেলপার ভবেন কুমার করেন অফিস সহায়কের কাজ । বিদ্যুৎ বিভাগের সড়ক বাতি পরিদর্শক জাকির হোসেন ও বিদ্যুৎ মিস্ত্রি সোহেল রানা ট্রেড লাইসেন্স ও ঘরভাড়া আদায়ের কাজ করেন। বিদ্যুৎ হেলপার আক্তার হোসেন খান করেন ঝাড়–দার সুপার ভাইজার ও মনিরুজ্জামান করেন প্রকৌশলী বিভাগের অফিস সহায়কের কাজ।
পানি বিভাগের অফিস সহায়ক মোহাম্মদ আলী মুকুল করেন পানির বিল প্রস্তুত ও আদায়ের কাজ, পাম্প চালক
আব্বাস উদ্দিন করেন ৫ নং ওয়ার্ডের কর আদায়ের কাজ, পাম্প চালক হামিদুর রহমান করেন কর নির্ধারন সহকারীর কাজ, পাম্প চালক রাজিয়া সুলতানা করেন টিকাদানকারীর কাজ, পাইপ লাইন মেকানিক জামাল উদ্দিন, আশরাফুল ইসলাম ও কামাল হোসেনকে দিয়ে করানো হয় ১, ২, ৩, ৪ ও ৯নং ওয়ার্ডের কর আদায়ের কাজ, মেকানিক জিয়ারুল ইসলাম করেন বালিগর্ত বাজারে পাম্প চালকের কাজ, এমএলএস এস শরিফুল ইসলাম খান করেন ট্রাক ও ভেকু চালকের কাজ।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক মাস্টাররোলে কাজ করা এক কর্মচারী বলেন, ১২ জনের মধ্যে গত বছর বেশ কয়েকজনকে
মাস্টার রোলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়োগের জন্য আমাকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এর মধ্যে কারো কারো কাছ থেকে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে।
পদে পাম্প চালক হামিদুর রহমান বলেন, আমি পাম্প চালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে মাস্টাররোলে মহেশপুর পৌরসভায় কাজ করতাম। আমার পদ মুলত পাম্প চালক। কিন্তু কর নির্ধারন সহকারী হিসেবে কাজ করি। আমাদের অফিসে অনেকেই এভাবে কাজ করছেন। সবাইতো আর স্ব-পদে কাজ করেন না।
রোলার চালক আক্তারুজ্জামান বলেন, আমি পদে রোলার চালক। বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্স সহকারীর কাজ করছি।
পাইপ লাইন মেকানিক কামাল হোসেন বলেন, আমি পাইপ লাইন মেকানিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে
চার বছর মাস্টাররোলে কর আদায় সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। পরবর্তীতে আমি পাইপ লাইন মেকানিক
হিসেবে নিয়োগ পেয়ে একই কাজ করছি।
পৌর প্রকৌশলী সোহেল রানা বলেন, মুল পদে লোকজন না থাকায় অন্য পদের লোকজন দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে।
নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন মেয়র। তিনি ও তার পরিষদের সদস্যরা নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না।
পৌর প্রশাসক খাদিজা আক্তার বলেন, পদ বদলে চাকুরী করার বিষয়ে কিছুটা জানতে পেরে লিখিত ভাবে ওই
বিষয়টি আমাকে জানানোর জন্য প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিয়েছি। আমাকে লিখিত ভাবে জানানোর পর
পরবর্তী পদক্ষেপ নিবো।







