সুলতান মাহমুদ, দিনাজপুর :
দিনাজপুর জেলায় এ বছর আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে চাষিরা দেখেছেন অভাবনীয় সাফল্য। লাভের মুখ দেখে এখন অনেকেই এই আগাম জাতের সবজি চাষে ঝুঁকছেন। এতে একদিকে যেমন স্থানীয় বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, তেমনি কৃষকরাও হয়েছেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ২৫ মাইল ও প্রাণনগর এলাকায় এখন চোখে পড়বে সারি সারি ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা,বেগুন, সিম, করলা, লাউ, টমেটো, শসা ও বরবটির ক্ষেত। প্রতিদিন এখান থেকে ১০ থেকে ১৫টি ট্রাক ভর্তি করে এসব সবজি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে।
জমি থেকেই পাইকাররা ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, শসা ও লাউ কিনে নিচ্ছেন। প্রতি কেজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, শসা ৪০ টাকা ও লাউ প্রতি পিস ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচের দ্বিগুণেরও বেশি লাভ পাচ্ছেন।
দিনাজপুরের মাটি ও আবহাওয়া সবজি চাষের জন্য অনুকূল হওয়ায়, বিশেষ করে আগাম জাতের চাষে এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। তাদের এই সাফল্যের গল্প ছড়িয়ে পড়ছে জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও। আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, করলা ও লাউ চাষ এখন দিনাজপুরের কৃষকদের নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
২৫ মাইল এলাকার ফুলকপি চাষি শামীম হোসেন বলেন, ৫০ শতক জমিতে আমি ১১ থেকে ১২ হাজার পিস ফুলকপির চারা রোপণ করেছি। যদি ১০ হাজার পিসও বিক্রি করতে পারি, তাহলে খরচ বাদে তিনগুণ লাভ হবে। বর্তমানে আমাদের এলাকায় প্রতিদিন ট্রাকে করে সবজি ঢাকায় যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জমি থেকেই শ্রমিক দিয়ে ফুলকপি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে আমরা দুই থেকে তিনগুণ লাভ পাচ্ছি।
একই এলাকার চাষি মন্তাকিম জানান, আমি এক একর জমিতে ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষ করেছি। এতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা। বাজার ভালো থাকায় জমি থেকেই চার লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এতে প্রায় দুই লাখ আশি হাজার টাকা লাভ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেরাই জমি থেকে সব সবজি তুলে নিয়ে গেছে।
আরেক চাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের এলাকায় এখন প্রায় প্রতিটি কৃষকই আগাম জাতের সবজি চাষ করছে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি ট্রাক সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। বিক্রিতে তেমন সমস্যা হয় না। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এখন আমরা অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছি।
দিনাজপুর সদরের চেহেলগাজী ইউনিয়নের বটতলী এলাকার চাষি এখলেসুর রহমান বলেন, আগাম জাতের শীতকালিন সবজি ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যেই হারভেস্ট করা যায়। যদিও এই সময়ে আবহাওয়া প্রতিকূল থাকে, খরচও কিছুটা বেশি, তবে লাভও অনেক বেশি। এজন্য দিনাজপুরের কৃষকেরা এখন আগাম জাতের সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
এদিকে দিনাজপুর সদরের উলিপুর গ্রামের সিম চাষি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, এ বছর পুটিয়া জাতের সিম চাষ করেছি। সেপ্টেম্বরের শেষে চারা রোপণ করেছি, অক্টোবরের শেষেই ফুল এসেছে। এখন কিছু সিম ধরেছে। বাজারে প্রতি কেজি সিম ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমার ১২ শতক জমিতে মোট খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। আশা করছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার সিম বিক্রি হবে। খরচ বাদেও প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা লাভ পাব।
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের উপজেলায় প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। বিশেষ করে ২৫ মাইল ও প্রাণনগর এলাকায় ব্যাপকভাবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লাউ, করলা, সিম ও টমেটো চাষ হচ্ছে। কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেক পাইকার জমি থেকেই সবজি কিনে নিচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, বীরগঞ্জ পৌরসভার সামনেই আগাম জাতের সবজির হাট বসে। এখানে চাষিরা পাইকারি দরে তাদের উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে পারেন। পাশাপাশি আমাদের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও চাষিদের বিভিন্ন সহায়তা ও বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে। এর ফলে দিনাজপুরে আগাম জাতের সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলেছে।







