শাহজাহান আলী মনন, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধি:
নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাদক ব্যবসায়ী দম্পতিসহ জব্দ করা একটি মোটর সাইকেল প্রায় পাঁচ মাস পর থানার বাইরে নিয়ে বিক্রির চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। পরে মোটর সাইকেলের প্রকৃত মালিকের স্বজনদের সহায়তায় সেটি উদ্ধার করে ফের পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকার পশ্চিমপাড়া থেকে ওই মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করা হয়।
থানা থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ বুধবার রাতেই চুরির মামলা করেছে। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। অনেকেই মনে করছেন চুরির মামলা করে দায় এড়ানোর চেষ্টা পুলিশের। বিষয়টি এখন টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে শহরের কয়ানিজপাড়ার ফারুক হোসেন ও মুক্তা বানু দম্পতির বাড়িতে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। অভিযানে ২০ পিস ইয়াবা ও ৩৮৫ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধারসহ মাদক বিক্রির নগদ ৬৫ হাজার টাকা, একটি মোবাইল ফোন ও নাম্বারবিহীন নেভি ব্লু রংয়ের ১৩৫ সিসির একটি মোটর সাইকেল জব্দ করা হয়।
সে সময় গ্রেফতার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী দম্পতিকে। ওই ঘটনার প্রায় পাঁচ মাস (১৪৬ দিন) পর বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে জব্দ করা সেই মোটর সাইকেলটি থানার বাইরে বিক্রির চেষ্টা করে একটি চক্র। এ সময় মোটর সাইকেল মালিকের স্বজনরা যৌথবাহিনীর অভিযানে জব্দ করা মোটর সাইকেল হিসেবে চিহ্নিত করে।
এ বিষয়ে সে সময় গ্রেফতার হওয়া মাদক মামলার আসামি মুক্তা বানুর ভাই আতিক হাসান বলেন, আমার বোন ও তার স্বামীকে যৌথবাহিনী মাদকসহ আটক করে। তখন তাদের মোটর সাইকেলটি জব্দ করে থানায় নেয়া হয়। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে একজন মুঠোফোনে জানায়, মোটর সাইকেলটি শহরের সন্নিকটে ধলাগাছ মতির মোড়ে বিক্রি করার চেষ্টা হচ্ছে। সেটি আপনাদেরই হবে মনে হচ্ছে।
এমন কথা শোনার পর আমি সেখানে গিয়ে মোটর সাইকেলের চেসিস নাম্বার ও কাগজপত্র মিলিয়ে দেখি সেটি আমার ভগ্নিপতির (বোনজামাই)। এরপর পুলিশকে বলি জব্দ করা মোটর সাইকেল বাইরে কিভাবে এলো? এনিয়ে তারা হতভম্ব হয়ে যায়। পরে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে এলে মোটর সাইকেলটি তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে সেটি তারা থানায় নিয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, যৌথবাহিনী ওই দম্পতিকে মাদকসহ আটক করে এবং মোটর সাইকেলটি জব্দ করে নিয়ে যায়। থানার মালখানায় মোটর সাইকেলটি থাকার কথা। পরে সেটি থানার বাইরে পাওয়া গেল, এটা প্রশাসনের দুর্বলতা ছাড়া কিছু নয়।
এ ঘটনায় থানা পুলিশ ওই রাতেই একটি চুরির মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ ব্যাপারে বুধবার রাতেই ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ঋষিকেশ বর্মনের সাথে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করার পর রং নাম্বার বলে লাইন কেটে দেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈয়দপুর থানায় ওই কর্মকর্তার সাথে সরাসরি কথা হয়। রং নাম্বার বলে লাইন কেটে দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
পরে জব্দ করা মোটর সাইকেল থানা থেকে কিভাবে বাইরে যায়, বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন গত ১৫ অক্টোবর রাতে থানায় একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত ডেকোরেশন এর লোকজন ছিল। তখনই হয়তো মোটর সাইকেলটি চুরি যায়। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
থানা পুলিশের জব্দ করা মোটর সাইকেল বাইরে নিয়ে বিক্রির চেষ্টা এবং আবারও সেই মোটর সাইকেল উদ্ধার ঘটনাটি সৈয়দপুরে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।