গাজা যুদ্ধের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কেবল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল না, বরং এখন তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার মুখে না দাঁড়ানোর পথ খুঁজছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান-এর এক নিবন্ধে এ মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক নাতালি টুচি।
তার নিবন্ধের শিরোনাম ছিল— “গাজা যুদ্ধে ইইউ জড়িত ছিল: ট্রাম্পের পরিকল্পনা এখন দায়িত্ব এড়ানোর অজুহাত হতে পারে না।”
টুচি লিখেছেন, গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় — যা এই শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ সংকটগুলোর একটি — সেখানে পশ্চিমা বিশ্বের, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা কেবল প্রশ্নবিদ্ধই নয়, বরং গভীরভাবে উদ্বেগজনক। নারী-শিশুসহ হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকের ওপর অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মধ্যেও পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া ছিল কার্যত এই অপরাধগুলোর বৈধতা দেওয়ার সমতুল্য।
তিনি উল্লেখ করেন, গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ে ইউরোপের আচরণ ছিল “নৈতিক ও আইনি দায় এড়ানোর কৌশল।” অর্থাৎ যুদ্ধ থামানোর চেষ্টার বদলে ইউরোপ বরং যুদ্ধবিরতিকে ব্যবহার করেছে নিজেদের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর অজুহাত হিসেবে।
নাতালি টুচি ইউক্রেন যুদ্ধ ও গাজা যুদ্ধের প্রতি ইউরোপের দ্বৈত আচরণের বিষয়টিও তুলে ধরেন। তিনি লিখেছেন, “রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউরোপ দৃঢ় নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও ইসরায়েলের ক্ষেত্রে প্রতীকী চাপ প্রয়োগ করতেও তারা রাজি হয়নি। এতে ইউরোপ তার সবচেয়ে দুর্বল ও বিভক্ত রূপ দেখিয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজার জন্য প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা ইউরোপের জন্য এক ধরনের ‘দায়িত্ব এড়ানোর হাতিয়ার’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিকল্পনার আড়ালে ইউরোপীয় দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং চরমপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবগুলোও বাস্তবায়ন করেনি।
গার্ডিয়ান বিশ্লেষকের মতে, “মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পক্ষের দাবি করা পশ্চিমা বিশ্ব যদি গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মুখে নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে তা কেবল নৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং অপরাধীদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সহযোগিতাও।”
নাতালি টুচি সতর্ক করে বলেন, “ইতিহাস নিপীড়নের মুখে নীরবতাকে ক্ষমা করবে না। পশ্চিম যদি নৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পেতে চায়, তবে তাকে দ্বিচারিতা পরিহার করে গাজার অপরাধের জন্য দায়ীদের দৃঢ়ভাবে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করাতে হবে।”