চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের জবাব উপস্থাপনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “শেখ হাসিনা রাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ (সিভিল ওয়ার) লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেনাবাহিনীকে বলেছিলেন— তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না?”
তিনি আরও বলেন, “যারা আসামি হয়েছেন, বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান, তাদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এত বড় অপরাধ সংঘটনের পরও তারা দোষ স্বীকার না করে বরং সাক্ষী ও মামলার পক্ষের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছেন, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংসের কথা বলছেন, এমনকি লাশ সাগরে ফেলে দেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন।”
তাজুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে বিভাজন তৈরি করে গোলযোগ লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেই ফাঁদে পা দেয়নি। জনগণও কোনো উসকানিতে সাড়া দেয়নি।”
সব পক্ষের বক্তব্য শেষে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে চলা এই মামলার রায়ের তারিখ আগামী ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করেছেন।
এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ছাড়াও মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ, শাইখ মাহদি ও আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্য সদস্যরা।
অন্যদিকে পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন শুনানি পরিচালনা করেন। রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
২০২৫ সালের ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরবর্তীতে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।
এই ঐতিহাসিক মামলায় শহীদ আবু সাঈদের পিতা সহ শহীদ পরিবারের সদস্যরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। স্টার উইটনেস হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। মোট ৫৪ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
এই মামলার বাইরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন— একটি ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের অভিযোগে এবং অন্যটি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং প্রশাসনের কিছু অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ চলছে।