জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদল নেতা মো. জোবায়েদ হোসেন হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ ‘ত্রিভুজ প্রেমের গল্প’ সাজিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ্ উদ্দীন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহিদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক রইছ্ উদ্দীন বলেন, “পুলিশ বলছে জোবায়েদকে আক্রোশে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আক্রোশে হত্যা হলে এলোপাতাড়ি আঘাতের চিহ্ন থাকে। অথচ জোবায়েদকে এক আঘাতে হত্যা করা হয়েছে—এটা তো পেশাদার হত্যাকারী ছাড়া সম্ভব নয়। তাহলে কি পেশাদার খুনি দিয়ে হত্যা করিয়ে অন্যদের ফাঁসানো হয়েছে?”
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, “মাহিরের উচ্চতা জোবায়েদের তুলনায় অনেক কম। তাহলে সে কীভাবে গলা পর্যন্ত পৌঁছে এমন আঘাত করতে পারে?”
অধ্যাপক রইছ্ উদ্দীন বলেন, “জোবায়েদ কেমন ছেলে ছিলেন, তা তার বিভাগ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক সহকর্মীরাই জানেন। তাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চরিত্রহননের চেষ্টা করা হলে এর পরিণাম ভালো হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বর্ষা যদি জোবায়েদকে পছন্দ করতেন, সেটি বর্ষার বিষয়। আর যদি কোনো সম্পর্ক থেকেও থাকে, তাহলে তার বাবা-মা নিশ্চয়ই জানতেন। তারা যদি জোবায়েদকে অপছন্দ করতেন, তাহলে কেন এতদিন তাকে টিউশনি করতে দিতেন?”
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করে জোবায়েদের স্মরণে শোকসভা করা হবে এবং দিবসটি তার প্রতি উৎসর্গ করা হবে।
“আমরা চাই, সত্য বেরিয়ে আসুক। নিরপরাধ কেউ যেন শাস্তি না পায়,” বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও চেয়ারম্যান, শাখা ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতৃবৃন্দসহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে মঙ্গলবার জোবায়েদের ভাই বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ গ্রেপ্তার দেখায় বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮), তার কথিত প্রেমিক মাহির রহমান (১৯) এবং ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)-কে।
ডিএমপির ভাষ্য অনুযায়ী, মাহিরকে বর্ষা বলেছিলেন—জোবায়েদকে সরানো না হলে তিনি মাহিরের হতে পারবেন না। এরপর এক মাস আগে থেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
তবে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পুলিশের এ বয়ানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।
প্রসঙ্গত, নিহত জোবায়েদ হোসেন ছিলেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী, জবি কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণের সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য। তিনি গত এক বছর ধরে পুরান ঢাকার আরমানীটোলার নুরবক্স লেনে এক ছাত্রীকে টিউশনি করাতেন।
রবিবার বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই বাসার তিনতলায় তাকে খুন অবস্থায় পাওয়া যায়। সিঁড়ি জুড়ে ছিল রক্তের দাগ, আর তিনতলার সিঁড়িতে উপুড় হয়ে পড়ে ছিলেন জোবায়েদ।