ইসরায়েলের পার্লামেন্ট (কনেসেট) একটি বিলের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে, যা দখলকৃত পশ্চিম তীর (West Bank)-এ ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উত্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি হবে অবৈধ দখলদারিত্ব বা সংযুক্তিকরণ (Annexation)।
ভোটাভুটি ও প্রক্রিয়া:
১২০ আসনের কনেসেটে ভোট হয় ২৫-২৪, অল্প এক ভোটের ব্যবধানে বিলটি প্রাথমিক পর্যায়ে পাস হয়।
এটি ছিল চার ধাপের মধ্যে প্রথম ভোট। বিলটি এখন বিদেশ বিষয়ক ও প্রতিরক্ষা কমিটিতে যাবে, এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের দিকে এগোবে।
বিলটির প্রস্তাবক ছিলেন আভি মাওজ, কট্টর ডানপন্থী ধর্মীয় দল নো’আম (Noam)-এর নেতা।
নেটানিয়াহু সরকারের অবস্থান:
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তার লিকুদ (Likud) দল বিলটির বিপক্ষে অবস্থান নেন।
লিকুদ এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই ভোট ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য বিরোধীদের একটি উস্কানি।”
তারা আরও বলেছে, “সত্যিকারের সার্বভৌমত্ব কেবল বিলের মাধ্যমে নয়, স্থলে বাস্তব কাজের মাধ্যমেই অর্জিত হবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া:
এই ভোটটি এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজায় যুদ্ধবিরতি রক্ষা করতে ইসরায়েল সফর করছিলেন।
এর মাত্র এক মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করতে দেবেন না।
রাজনৈতিক জটিলতা ও ভবিষ্যৎ প্রভাব:
এই বিল যদি পাস হয়, তাহলে এটি দুই-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে কার্যত ধ্বংস করবে — যা বহু দশক ধরে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সমর্থন করে এসেছে।
অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ ও জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির সহ জোটের অনেক ডানপন্থী সদস্য বিলটির পক্ষে ভোট দেন।
স্মোটরিচ বলেন,
“সময় এসেছে পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করার — পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার অঞ্চল জুড়ে।”
আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী:
পশ্চিম তীর একটি দখলকৃত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃত এবং ইসরায়েলের এর উপর যেকোনো সার্বভৌম দাবি জাতিসংঘের রেজুলেশন অনুযায়ী অবৈধ।
এই ধরনের সংযুক্তিকরণ হবে:
জেনেভা কনভেনশনের লঙ্ঘন
ফিলিস্তিনি অধিকার লঙ্ঘন
দুই-রাষ্ট্র সমাধানকে প্রতিহত করার পদক্ষেপ
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
United Nations প্রধান António Guterres বলেছেন, পশ্চিম তীরের ধাপে ধাপে সংযুক্তিকরণ (annexation) অবৈধ এবং দুই‑রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে পারে। Reuters
মানবাধিকার বিষয়ক উচ্চা কমিশনার Michelle Bachelet বলেছিলেন, “সংযুক্তিকরণ অবৈধ, একদিনে হোক বা একাংশে হোক” এবং এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য, ইসরায়েলের জন্য এবং অঞ্চলের জন্য বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। euronews
বিভিন্ন আরব ও ইসলামী দেশ — যেমন United Arab Emirates, Jordan, Arab League — একজোট বিবৃতিতে বলেছে, এই ধরনের এক‑পক্ষীয় পদক্ষেপ “সর্বশেষ বেড়ে ওঠা উত্তেজনার জায়গা” এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। The National+1
United Kingdom‑র স্থায়ী প্রতিনিধিদল এক বক্তব্যে পরিষ্কার জানিয়েছেন, একমাত্র কার্যকারি সমাধান হলো দুই‑রাষ্ট্র সমাধান, এবং পশ্চিম তীরের একপক্ষীয় সংযুক্তিকরণ তা বিপন্ন করে। GOV.UK
ফিলিস্তিনি প্রতিক্রিয়া
Palestinian Authority (PA)‑র একজন শীর্ষ কর্মকর্তা Hussein al‑Sheikh বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত “ফিলিস্তিন জনগণের অধিকারপ্রবণ হামলা” এবং দুই‑রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনায় একটি গুরুতর ধাক্কা। The Times of Israel+1
Hamas বলেছে, কনেসেটের এই ভোট “শূন্য ও অকার্যকর” এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বৈধতা পরিবর্তন করতে সক্ষম নয়। তারা পশ্চিম তীরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান করেছে। Middle East Monitor
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য মতে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ “উপনিবেশবাদী অভিযানকে শক্তি যোগায়”, ঘরবাড়ি উচ্ছেদ এবং বসতি সম্প্রসারণের সঙ্গে যুক্ত। Al Jazeera
সম্ভাব্য রাজনৈতিক ও আইনি প্রভাব
যদি বিল আইন হয়ে যায়, তাহলে পশ্চিম তীরের উপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব প্রবর্তিত হবে — যা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের রেজুলেশনের প্রায় সব দিক থেকেই বৈধ নয় বলেই বিবেচিত হচ্ছে।
এটা দুই‑রাষ্ট্র সমাধানের (Israeli–Palestinian two‑state solution) ধারণাকে দৃশ্যত বিপন্ন করে দেবে, কারণ পশ্চিম তীর ফিলিস্তিনিদের জন্য মূল ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে চাপ ও সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা বা রাজনৈতিক আলাদা অবস্থান বাড়তে পারে — যেমন ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা অন্যান্য দেশ ইসরায়েলের ওপর পদক্ষেপ নিতে পারে।
ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব এবং অন্যান্য মুসলিম দেশগুলি ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নতুন কূটনৈতিক বা সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিতে পারে — যেমন রাষ্ট্র স্বীকৃতি প্রসার, আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা, বা রাষ্ট্রীয় প্রচারণা।