মো আমিরুল ইসলাম
পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় বন বিভাগের গাছ রাতের অন্ধকারের পাশাপাশি দিনের বেলায়ও অবাধে গাছ কাটা হতো। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে অবাধে গাছ কেটে নিয়ে গেলেও বনবিভাগের লোকজন কিছু করতে পারতো না। তাদের ক্ষমতার প্রভাবে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দিতে সাহস পেতো না বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার দায়িত্ব গ্রহণের পর দেবীগঞ্জ রেঞ্জ পরিবর্তন হয়ে যায়। তিনি গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর দেবীগঞ্জ রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তিনি আসার পর বাগানের পূর্বের চিত্র পুরোদমে বদলে দিয়েছেন। তিনি চলে গেলে আবার বন বাগান পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে এমন আশঙ্কা করছেন এলাকার সচেতন মানুষ। তিনি আসার পর বন বিভাগের গাছ কাটার মামলা পূর্বের তুলনায় দিগুন হয়েছে। বর্তমানে গাছ কাটা প্রায় নেই বললেই চলে। রাতের অন্ধকারে গাছ কাটা ব্যক্তিদের কাছে তিনি অপ্রতিরুদ্ধ হয়ে যান। অনেকের কাছে অপছন্দের ব্যাক্তি হয়ে যান। তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর বটতলী বিটের বানিয়াপুর মৌজার দখল করা ২৭ দশমিক ২০ একর বনভূমি দখল মুক্ত করেন। যার সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বন বিভাগের জমি রক্ষা করার জন্য দেবীগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিস্ট্রারকে বন বিভাগের জমি ক্রয়, বিক্রয়, হস্তান্তর ও রেজিস্ট্রি না করার জন্য লিখিত ভাবে পত্র দিয়েছেন। যার কারনে বন বিভাগের ভূমি আর ক্রয়, বিক্রয় ও রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। বন বিভাগের ভূমি নামজারী প্রদান না করার জন্যও দেবীগঞ্জের ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে লিখিত পত্র দেয়ার পর থেকে আর বন বিভাগের ভূমি নামজারী হচ্ছে না। বন বিভাগের ভূমি ব্যক্তি মালিকানায় আর.এস রেকর্ড হওয়াতে তিনি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালের রেকর্ড সংশোধনের জন্য মামলাও দিয়েছেন।
নিশি কান্ত মালাকার দেবীগঞ্জে আসার পর থেকে বন বিভাগ শক্তিশালী রুপ নিতে শুরু করে। ফলে এলাকার গাছ চোর ও ভূমি মালিকরা তাকে বিভিন্নভাবে অপমাণিত ও হেয় প্রতিপন্ন করার পায়তারা করতে থাকে এবং বিভিন্ন উপায়ে তাকে দেবীগঞ্জ থেকে বদলী করানোর চেষ্টা করে। পহেলা ফেব্রুয়ারী বন বিভাগের সৃজিত বাগানের চোরাই ইউক্যালিপ্টাস গাছের লগ সহ একটি ভ্যান আটক করেন নিশিকান্ত মালাকার। সে গাছ কাটার সাথে সুফল প্রকল্পের ভাতা প্রাপ্ত পেট্রোল টিমের কয়েকজন ও ভ্যান চালক জড়িত থাকায় তাদের নামে বন মামলা দায়ের করা হয়। পরে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারী স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে দেবীগঞ্জ রেঞ্জ অফিসে এসে জড়ো হন। অভিযুক্তদের সাথে কিছু সাংবাদিকের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। তারা আটককৃত ভ্যান ছাড়ানোর জন্য রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকারের কাছে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করে। তখন রেঞ্জ কর্মকর্তা বলে দেন ভ্যান গাড়ি ও ইউক্যালিপ্টাস গাছের লগ মামলায় জব্দ দেখানো হয়েছে ফলে ভ্যান ছেড়ে দেয়া সম্ভব না। তখন তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অপমান, অপদস্ত শুরু করলে তিনি দেবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দেবীগঞ্জ সেনা ক্যাম্পে ও দেবীগঞ্জ থানায় জানালে তারা এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরের দিন সুফল প্রকল্পের ভাতাভূক্ত পাহারাদার ইউসুফ রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার কে ফোন দিয়ে অশ্লীল কথা বলেন। তিনি ইউসুফ ও শাকিলকে বলেন, তোমরা যদি গাছ কাটার সাথে জড়িত থাকো তাহলে তোমাদের নামে মামলা হবে তখন তোমরা বিপদে পড়বে। তাদেরকে একথা বলে সতর্ক করে দেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, এরপর যদি পুনরায় তোমরা গাছ কাটো তাহলে তোমাদের নামে আরও মামলা হবে। তাই তোমরা ভাল ভাবে বনের গাছ পাহারা দাও।
এ অডিও রেকর্ড করে তাদের অনুসারী আত্মীয় কিছু সংবাদকর্মীদের দিয়ে বিভিন্ন ভাবে সাজিয়ে তারা নিউজ করান এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে তার বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন কথা বলেন। দেবীগঞ্জ বন বিভাগকে রক্ষা করতে হলে নিশি কান্ত মালাকারের মত দক্ষ ব্যক্তির প্রয়োজন বলে দেবীগঞ্জের সচেতন মহল মনে করছেন। তারা আরও জানান, নিশিকান্ত মালাকার দেবীগঞ্জ রেঞ্জ হতে চলে গেলে দেবীগঞ্জ বন বিভাগ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে। যা দেবীগঞ্জ রেঞ্জের, এলাকাবাসীর ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি
০৯/০২/২০২৫