রাজু রহমান, যশোর জেলা প্রতিনিধি:
যশোরের শার্শা উপজেলায় তিনদিনের ব্যবধানে দুইটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে যারা যায় আট দিন আগে নিখোঁজ হওয়া ভ্যানচালক মাসুদ রানার লাশ উদ্ধার করেছে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলে ঝিকরগাছা উপজেলার বায়সা ও আশিংড়ী গ্রামের মাঝামাঝি আফিল মুরগি ফার্ম সংলগ্ন এলাকায় রবিউল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নির্মাণাধীন বাড়ির ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মাসুদ রানার বয়স ২১ বছর। তিনি শার্শা উপজেলার উলাশী গ্রামের বাসিন্দা এবং পেশায় একজন ভ্যানচালক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, ঘরের জানালার সঙ্গে দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় লাশটি ঝুলছিল।স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ নুর মোহাম্মদ গাজী ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেন। পরে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
মৃতের বাবা আব্দুল আজিজ ওরফে নুর মোহাম্মদ লাশ শনাক্ত করে জানান, গত সোমবার দুপুরে তার ছেলে মাসুদ বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফেরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও না পেয়ে তারা শার্শা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
আব্দুল আজিজ অভিযোগ করেন, ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীরা তার ভ্যানের দড়ি দিয়েই গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করে লাশটি লুকিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, আমার ছেলেকে যারা নিয়ে গিয়েছিল, তারাই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনাস্থলটি জনবহুল এলাকা থেকে কিছুটা দূরে এবং ওই বাড়িটি তখন ফাঁকা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, হত্যাকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে লাশটি সেখানে এনে ঝুলিয়ে রাখে।
এ বিষয়ে ঝিকরগাছা থানার ওসি নুর মোহাম্মদ গাজী বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি একটি হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে। লাশের গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি।
অন্যদিকে নিখোঁজের ৪ দিন পর যশোরের শার্শায় আব্দুল্লাহ (২৫) নামে আরও এক ভ্যানচালকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে শার্শা থানা পুলিশ।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কাজিরবেড় গ্রামের একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে স্টিলের বাক্সের ভিতর থেকে এ মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।পুলিশের দেওয়া তথ্যে জানাযায়,গত ১০ অক্টোবর থেকে আব্দুল্লাহ নিখোঁজ ছিলেন। নিহত আব্দুল্লাহ শার্শার গাতিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত আব্দুল্লাহর বাবা ইউনুস আলী জানান, ১০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে তার ছেলে আব্দুল্লাহ জীবিকার তাগিদে ভ্যান নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সন্ধান না পেয়ে ১১ অক্টোবর শার্শা থানায় সাধারণ ডায়েরি (নং-৫০৫, তারিখ ১১/১০/২০২৫) করেন।
মঙ্গলবার ভোরে কাজিরবেড় গ্রামে একটি ছেলের লাশ পাওয়া গেছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ শনাক্ত করি। তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে এমনটি দাবি করেছেন নিহতের পরিবার।
এদিকে, লাশ উদ্ধারের খবরে কাজীরবেড় এলাকায় উৎসুক জনতার ভিড় জমে। অন্যদিকে, শোকের ছায়া নেমে এসেছে আব্দুল্লাহর গ্রামে।
জিডি সূত্রে পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) যৌথ তৎপরতায় ঝিকরগাছা থানা এলাকা থেকে ভিকটিমের ভ্যানটি উদ্ধার করে।
পরবর্তীতে মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে মালয়েশিয়া প্রবাসী বাবলু সরদারের একটি পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির টিনের বক্সের ভেতর থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভ্যান ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় শার্শা থানায় হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বলেন, ভিকটিম নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা ও ডিবি পুলিশ একযোগে কাজ শুরু করি মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি যশোর ২৫০ শয্য বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন হিসেবে শার্শার কাজিরবেড় গ্রামের বড় নেদার ছেলে আশানুর রহমান ওরফে আশা (২৮), মুকুল হোসেন (৩৮) এবং সাগর হোসেন নামের তিনজনকে আটক করা হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে।