গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আঞ্চলিক নেতারা একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিশরের শারম আল-শেখ শহরে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। খবর এএফপি।
ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্প। এটি ইসরায়েল ও হামাসের জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর স্বাক্ষরিত হয়।
ইসরায়েলে একটি ঝটিকা সফরে গিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্প শারম আল-শেখে গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তিনি মিশর, কাতার ও তুরস্কের নেতাদের সঙ্গে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। শারম আল-শেখের রিসোর্টে ট্রাম্প বলেন, “এটি বিশ্বের ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন।” স্বাক্ষরের আগে তিনি দু’বার নিশ্চিত করেছেন, “এটি টিকে থাকবে” এবং নথিতে নিয়ম-কানুন ও অন্যান্য বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।
গাজার যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হামাস উপত্যকায় দুই বছর ধরে তাদের কাছে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের সর্বশেষ ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিনিময়ের অংশ হিসেবে তাদের কারাগারে থাকা ১,৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি পার্লামেন্টে উপস্থিত হলে দীর্ঘক্ষণ করতালির মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে তিনি বলেন, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িত ছিল। এই যুদ্ধের ভার বহন করতে পারে কেবল গর্বিত জাতি ও বিশ্বস্ত জনগণ। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের পরিবারগুলোতে শান্তির দিন আসেনি। এখন শুধু ইসরায়েলিরাই নয়, ফিলিস্তিনিরাও দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক অবসান অনুভব করছে।
জিম্মি পরিবারগুলো তেল আবিবে সমবেত হয়ে উল্লাস করেছে। গাজার খান ইউনিসে ধীরগতিতে আসা রেড ক্রসের বাসগুলো স্বজনদের উষ্ণ আলিঙ্গনে পূর্ণ হয়েছে। পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বন্দিদের বহনকারী বাসে জনতা ভীড় জমিয়ে তাদের স্বাগত জানায়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাসের কাছে জিম্মি থাকা ২৭ জনের মৃতদেহ এবং ২০১৪ সালের এক নিহত সৈন্যের দেহাবশেষও ফেরত দেওয়া হবে। ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই দুই বন্দির মৃতদেহ পেয়েছে এবং আরও দু’জনের দেহ ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশা করছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়, যেখানে ১,২১৯ জন নিহত হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ৪৭ জনকে ছাড়া বাকি জিম্মিদের আগের যুদ্ধবিরতিতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।
গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর স্থানীয় মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। তবে যুদ্ধের ফলে বেশিরভাগ অঞ্চল ধ্বংস হয়েছে। গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে মুক্তি পাওয়া ২৫ বছর বয়সী ইউসুফ আফানা বলেন, “সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো, আমার পুরো পরিবার আমাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছে। আমি ১০ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। এটি আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর এক।”
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য ছিল গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে তার ভূমিকা উদযাপন করা। তবে এখনও কিছু বিষয় আলোচনার অপেক্ষায় রয়েছে, যেমন হামাসের নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি এবং বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে ইসরায়েলের প্রতিশ্রুতি।
সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প গাজার জন্য ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, যা যুদ্ধবিরতিতে সহায়তা করে। হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম আহ্বান জানিয়েছেন, “ইসরায়েলের আচরণ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত থাকবে এবং জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন পুনরায় শুরু হবে না।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলের অভিযানে কমপক্ষে ৬৭,৮৬৯ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। জাতিসংঘ এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য মনে করে।