বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সম্প্রতি ‘সেফ এক্সিট’ শব্দটি আবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তর্ক শুরু হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে এটি নতুন ধারণা নয়। গত ৫৪ বছরে অন্তত তিনবার বড় রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় ‘সেফ এক্সিট’-এর ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতিতে সেফ এক্সিট বলতে সাধারণত এমন পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়, যেখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অভিযোগ বা রাজনৈতিক চাপ সত্ত্বেও নিরাপদে চলে যেতে পারে। এতে দেশের সংঘাত কমে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা এড়ানো যায়।
কেন সেফ এক্সিট দেওয়া হয়
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “চলে গেলে সেও নিরাপদ থাকলো, আমরা ঝামেলামুক্ত থাকলাম। এটি এমন এক সমঝোতা, যেখানে অভিযুক্ত নিরাপদে সরে যান এবং যারা সাহায্য করে তারা একই লক্ষ্য পূরণ করে।”
১৯৭৫: বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রথম সেফ এক্সিট
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হত্যার পর তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট সেনা সদস্যদের বিচারের বাইরে রাখা হয়। ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়, এমনকি কয়েকজনকে বিদেশে কূটনৈতিক পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম সেফ এক্সিট হিসেবে ইতিহাসে রেকর্ড হয়।
২০০৭–২০০৮: এক-এগারোর সরকারের প্রস্থান
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ অনেক রাজনীতিক গ্রেপ্তার হলেও, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে সেফ এক্সিট পরিকল্পনা কার্যকর হয়। তখন শীর্ষ সেনা ও তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করেন। এটি ছিল দেশের দ্বিতীয় বড় সেফ এক্সিট।
২০২৪: গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার দেশত্যাগ
সাম্প্রতিক ইতিহাসে তৃতীয় সেফ এক্সিট ঘটে ৫ আগস্ট ২০২৪। গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতিত তৎকালীন সরকারকে সমর্থন করার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকলেও তাকে নিরাপদভাবে দেশত্যাগের সুযোগ দেওয়া হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “সে প্রাণে বেঁচেছেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ভারতের জন্য নিরাপদ ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এটি স্পষ্টভাবে সেফ এক্সিট।”