দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুর বীরগঞ্জের মদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ রেজাউল করিমকে একই দিনে সকালে অনুপস্থিত দেখিয়ে বিকেলে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করার ঘটনায় ৯ মাস পর তদন্ত শুরু হয়েছে।
আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে বীরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে এই তদন্ত পরিচালনা করেন রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান।
তবে তদন্তে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম ও বর্তমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দু’জনেই অনুপস্থিত ছিলেন।
তদন্তের খবর পেয়ে অভিভাবক ও এলাকাবাসী উপজেলা শিক্ষা অফিসের সামনে মানববন্ধন করে অভিযুক্ত সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলামের শাস্তির দাবি জানান।
জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক রেজাউল করিম অসুস্থ থাকায় প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র দাসের কাছে দুই দিনের ছুটি নেন। কিন্তু ওই সময় সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে একই দিনে সকাল ১০টা ৮ মিনিটে তাঁকে “অনুপস্থিত” দেখিয়ে বিকেলেই সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জারি করেন। সরকারি কর্মচারী নিয়মিত উপস্থিতি বিধিমালা ২০১৯ অনুযায়ী এটি স্পষ্ট বিধি লঙ্ঘন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং চিঠিতে ৭ দিনের মধ্যে তদন্তের নির্দেশ থাকলেও প্রায় ৯ মাস পর এসে তদন্ত অনুষ্ঠিত হলো।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া এলাকাবাসী জানান, দুর্নীতিবাজ ডিপিইও নজরুল ইসলাম নিজের অপকর্ম ঢাকতেই এতোদিন তদন্ত বিলম্ব করেছেন, বলেন স্থানীয় অভিভাবক রফিকুল ইসলাম।
এলাকাবাসী শাহিনুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, রেজাউল স্যার অসুস্থ ছিলেন, প্রধান শিক্ষককে বলে ছুটি নিয়েছিলেন। অথচ ডিপিইও সকালে ফোন করে অনুপস্থিত দেখান, বিকেলেই বরখাস্ত করেন— এটা অন্যায়।”
অভিভাবক মোছাঃ রুবিনা খাতুন বলেন, আমাদের স্কুলের ভালো শিক্ষককে মিথ্যা অভিযোগে অপমান করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।
এলাকাবাসীর দাবি, বরখাস্তকে বৈধ দেখাতে পরদিন ৩ অক্টোবর ২০২৪ “বিষ্ণু গং” নামে একজনের মিথ্যা অভিযোগপত্র ডিপিইও নিজেই দাখিল করেন। কিন্তু বিষ্ণু গং পরে বলেন,আমি কোনো অভিযোগ করিনি, কে আমার নামে আবেদন দিয়েছে জানি না।
অসহায় শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, আমি অসুস্থ থাকার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিলাম। তবুও অন্যায়ভাবে আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে আমি আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এখন ন্যায়বিচারের আশায় ঘুরছি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, তদন্ত চলছে। যদি সাবেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নজরুল ইসলাম দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে জমা দেয়া হবে।
অতীতের অভিযোগ দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রঞ্জু বলেন
ডিপিইও নজরুল ইসলাম দিনাজপুরে কর্মরত থাকাকালে দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি তদন্তে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।