যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক বিশ্ব বাণিজ্যে বড় পরিবর্তন এনেছে। এতে চীনের রপ্তানি প্রবাহ ঘুরে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারের দিকে, যা বাংলাদেশের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে।
ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ৭ শতাংশ, বিপরীতে চীনের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। অথচ চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল। জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছিল ৩৭ শতাংশ, আর চীনের ২৫ শতাংশ।
তথ্য বলছে, জুলাই মাসে ইইউতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি দাঁড়ায় প্রায় ১৬৮ কোটি ডলারে, যেখানে চীনের রপ্তানি ছাড়িয়ে যায় ২৭৮ কোটি ডলার। জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১ হাজার ১৯৭ কোটি ডলারের পোশাক, চীনের রপ্তানি সেখানে ১ হাজার ৪০৬ কোটি ডলারের বেশি। এ সময়ে ইইউতে মোট পোশাক আমদানি বেড়েছে ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এই পরিস্থিতির মূল কারণ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি। চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সব দেশের পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক এবং বাংলাদেশসহ ৬৫ দেশের পণ্যে ভিন্ন হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। বিশেষ করে চীনা পণ্যে এক পর্যায়ে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক ঘোষণা হয়, যা পরে কিছুটা কমে ৫০–৫৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ে এবং দেশটি ইইউকে প্রধান বিকল্প বাজারে পরিণত করে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে বাধার কারণে চীন ও ভিয়েতনাম বিকল্প হিসেবে ইইউতে রপ্তানি বাড়াচ্ছে। এতে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় পোশাক ব্র্যান্ডগুলো সহজেই দাম কমানোর চাপ দিচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতার ঝুঁকি তৈরি করছে।
বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে তারা ইইউতে ঝুঁকছে। তাদের নিজস্ব কাঁচামাল, কম লিড টাইম আর উচ্চ উৎপাদনশীলতা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখছে। বাংলাদেশের ভরসা এখন কেবল ইইউতে শুল্কমুক্ত সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবহার।”
বর্তমানে ইইউ বাজারে চীন শীর্ষ রপ্তানিকারক, বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে। এর পর আছে তুরস্ক, ভারত ও কম্বোডিয়া।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি বৈশ্বিক রপ্তানি ভারসাম্যে বড় পরিবর্তন এনেছে। চীন এই পরিস্থিতি থেকে লাভবান হলেও বাংলাদেশকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কৌশলগতভাবে ইইউ বাজারে আরও মনোযোগী হতে হবে।







