মোঃ ইকরাম হাসান ,দাউদকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি :
রসিকতা করে বন্ধুদের ‘বাঁশ দেওয়ার’ গল্প সবার জীবনেই কমবেশি আছে। আড্ডায়, ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিংবা মিমে—এই কথাটা যেন একটা মজার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে আমাদের মাঝে। তবে আজ ১৮ সেপ্টেম্বর, এই দিনটিতে সত্যিকারের “বাঁশ দেওয়া” যেতে পারে, তবে একদম ইতিবাচক অর্থে। আজ বিশ্ব বাঁশ দিবস বছর ঘুরে এই একটি দিন যা বাঁশের বহুমুখী ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব গুণাগুণ ও বিশ্ব অর্থনীতিতে এর অবদানের কথা মনে করিয়ে দেয়।
বিশ্বজুড়ে ২০০৯ সালের এই দিনে প্রথমবার পালিত হয় বাঁশ দিবস। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ্ব বাঁশ কংগ্রেসে প্রায় ১০০টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে দিনটিকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রস্তাবটি এসেছিল বিশ্ব বাঁশ সংস্থার তৎকালীন সভাপতি কামেশ সালামের পক্ষ থেকে। মূল লক্ষ্য ছিল—বাঁশ নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এই সবুজ সম্পদকে কাজে লাগানো।
বাঁশ কোনো সাধারণ গাছ নয়—এটি প্রকৃতির এক বিস্ময়। দ্রুত বাড়ে, সহজে চাষ হয়, মাটি ধরে রাখে, কার্বন শোষণ করে, আবার কাটার পরও পুনরায় গজায়। নির্মাণ, আসবাব, কুটির শিল্প, এমনকি খাদ্য হিসেবেও এর চাহিদা বিশ্বজুড়ে। বাঁশ কোড়ল—বাঁশের কচি ডালের ভেতরের অংশ—অনেক দেশে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে জনপ্রিয়, আর আমাদের দেশেও এটি বেশ স্বাদু ও স্বাস্থ্যকর একটি উপাদান।
বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনযাত্রায় বাঁশ যুগ যুগ ধরে জড়িত। ঘর বানানো, মাছ ধরা, খুঁটি তৈরি, মাচা বাঁধা, ঝুড়ি ও হস্তশিল্প—বাঁশ যেন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। অথচ আমরা অনেকেই আজও এর প্রকৃত মূল্য বা সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিই না।
এই বিশ্ব বাঁশ দিবসে তাই রসিকতার “বাঁশ” থেকে বেরিয়ে এসে, সত্যিকারের বাঁশের তৈরি একখানা উপহার দিতে পারেন প্রিয়জনকে। হতে পারে সেটা একটি বাঁশের কলমদানি, বাঁশের তৈরি পানির বোতল, ব্যাগ কিংবা কোনো হস্তশিল্পের পণ্য। এতে একদিকে যেমন আপনি একজন বন্ধুকে চমকে দেবেন, অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহারেও উৎসাহ দেবেন।
আজকের দিনে শুধু এক টুকরো বাঁশ নয়, ছড়িয়ে দিন একটা সবুজ বার্তা—প্রকৃতিকে ভালোবাসার, টেকসই জীবন বেছে নেওয়ার এবং মাটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বার্তা। বিশ্ব বাঁশ দিবসে, এবার একটু ভিন্নভাবে “বাঁশ দিন”—হাসির খোরাক নয়, বরং উপহার হয়ে থাকুক কোনো কাছের মানুষের হাতে। বাঁশ আমাদের মাঝে সবুজের বার্তা ছড়িয়ে দিক আজকের দিনে এটাই প্রত্যাশা।