সংবিধান সংস্কারে সাংবিধানিক আদেশ বা গণভোটের পরিবর্তে রাজনৈতিক সমঝোতাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার সুযোগ দিতে চায় তারা। সরকার জানাচ্ছে, সনদ বাস্তবায়নের কোনো পদ্ধতি এখনই চাপিয়ে দেওয়া হবে না।
রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে এমন বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান যে নবজাগরণের সুযোগ দিয়েছে, তা কেবল সমঝোতার পথেই বাস্তবায়ন সম্ভব।
আলোচনায় ছাড়, কিন্তু অনড় অবস্থানও রয়ে গেছে
সংলাপে উপস্থিত সূত্র জানায়, সরকার মনে করছে—কোনো প্রক্রিয়া চাপিয়ে দিলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, আবার সনদ বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচন নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেবে। তাই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা চলবে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তপশিল ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নভেম্বরের শেষ নাগাদ সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলোচনার জন্য দুই দিন সময় দিয়ে বুধবার আবার বৈঠকে বসবে কমিশন।
বিএনপি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের অবস্থান কিছুটা নরম করে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ‘প্রভিশনাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার’ ও গণভোটের কথা বলেছে। অন্যদিকে এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন করে সংস্কারকে টেকসই করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সরকারের অবস্থান
বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে বৈঠকে সাংবিধানিক আদেশ, গণভোট ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নের বিভিন্ন পথ তুলে ধরা হয়। এমনকি ‘সংবিধান আদেশ–২০২৫’ জারির প্রস্তাবও আসে। তবে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক ঐকমত্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন।
ড. ইউনূস বলেন, “মূল কাজ হয়ে গেছে, এখন শুধু শেষ অংশটুকু বাকি। সমঝোতার মাধ্যমেই সেটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হবে। এতে পৃথিবীর জন্য নজির সৃষ্টি হবে।” তিনি আরও বলেন, “স্বৈরাচার আসার পথ বন্ধ করতে হলে সবাইকে একমত হতে হবে। দ্বিমত হলে কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।”