জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের পক্ষে বিপুল সমর্থন এসেছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে ১৪২টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। মাত্র ১০টি দেশ, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে, প্রস্তাবটির বিপক্ষে যায়। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। ফ্রান্স ও সৌদি আরব এই প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল, যা ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ নামে পরিচিত।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সেখানে হামাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। একই সঙ্গে হামাসকে অস্ত্রসমর্পণ করে শাসন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়। দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান বাস্তবায়নের জন্য গাজায় চলমান সংঘাত বন্ধের বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
আরব লিগ ইতিমধ্যে এই ঘোষণাকে সমর্থন জানিয়েছে। জুলাইয়ে জাতিসংঘের ১৭টি দেশ এতে সই করেছিল। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে ১৪৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আসছে ২২ সেপ্টেম্বর রিয়াদ ও প্যারিসের যৌথ সভাপতিত্বে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েল এই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোর্সটেইন বলেছেন, জাতিসংঘ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তবে ফিলিস্তিনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুসেইন আল–শেখ প্রস্তাবটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রমাণ।
একই সময় গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ মাসে ৬৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বর্তমানে গাজা নগরী দখলের লক্ষ্যে তীব্র আক্রমণ চালাচ্ছে ইসরায়েল।
অন্যদিকে পশ্চিম তীরে নতুন করে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি একটি চুক্তিতে সই করে জানিয়েছেন, “কোনো ফিলিস্তিন রাষ্ট্র থাকবে না, এই জায়গা আমাদের।” পরিকল্পনা অনুযায়ী পশ্চিম তীরে ৩ হাজার ৪০০টি নতুন বাড়ি নির্মাণ করা হবে, যা পূর্ব জেরুজালেমকে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া শান্তি সম্ভব নয়। জাতিসংঘে ইতিমধ্যে অধিকাংশ দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, বাকি দেশগুলোকেও দ্রুত এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে তারা।