নিজস্ব সংবাদদাতা, সরিষাবাড়ী (জামালপুর):
গ্যাস সংকটের কারণে প্রায় ২০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা। এতে ভরা আমন মৌসুমে সার সংকটের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন কৃষকরা এবং কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কারখানার সাথে জড়িত প্রায় তিন হাজার শ্রমিক।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) সকালে কারখানার প্রধান ফটকের সামনে এলাকাবাসী, স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মী, সার ডিলার, পরিবহন ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করে দ্রুত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে কারখানা চালুর দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন— সরিষাবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি চান মিয়া চানু, সদস্য রাশেদুল ইসলাম লিটন, পোগলদিঘা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ ফকির, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান ফরহাদ, ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি লিটন তালুকদার, আওনা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি সুরুজ মেম্বার, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল খালেকসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মী ও পেশাজীবীরা।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যমুনা সার কারখানা জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের দুই বিভাগের ১৬টি জেলার প্রায় ২১ জেলায় ইউরিয়ার চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১,৭০০ মেট্রিক টন। কিন্তু গ্যাস চাপ স্বল্পতা ও প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে উৎপাদন কমে যায়।
২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনার গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এরপর থেকেই উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানা সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠাকালীন ২৫ বছরের সক্ষমতা ধরা হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের ফলে ৩৪ বছর পরও কারখানায় বড় ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। গ্যাস সরবরাহ পেলে ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণ উৎপাদনে ফেরা সম্ভব। বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা করে ২০ মাসে আনুমানিক ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চলতি মাসেই কারখানা চালু না হলে পিক সিজনে সার সংকট দেখা দেবে। এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সরকারকে উচ্চমূল্যে সার আমদানি করে ভর্তুকি দিতে হবে।
তারা উত্তরাঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন ও স্থানীয় অর্থনীতির স্বার্থে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন।